রাজশাহীর উপশহর সপুরা গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকার উত্তরায় প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত পাইলট তৌকির ইসলাম সাগর। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় রাজশাহী জেলা মুক্তিযোদ্ধা স্টেডিয়ামে জানাযা শেষে তাকে নগরীর সপুরা গোরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাযা ও দাফনের সময় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা, সাগরের আত্মীয় স্বজন ও সাধারণ মানুষ সাগরের জানাযায় অংশ নেন।
জানাযার আগে পাইলট সাগরের জীবনী পড়ে শোনানো হয়। এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম ও মামা মতিউর রহমান। তহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সেই হতভাগ্য পিতা, যে নিজের সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়েছি।’ তিনি সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চান। পাশাপাশি মাইলস্টোন স্কুলের এ বিমান দুর্ঘটনায় শিশুসহ আরও যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সবার জন্যই দোয়া চান তহুরুল ইসলাম।
এরআগে আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে সাগরের মরদেহ রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে আনা হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৩টা ২০ মিনিটে ক্যান্টনমেন্টের পাশেই রাজশাহী নগরীর উপশহরের ৩নম্বর সেক্টরে ভাড়া বাসায় সাগরের মরদেহ নিয়ে যান সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা। এ সময় সাগরকে দেখার জন্য তার বাসভবনের সামনে সাধারণ মানুষ ভিড় করেন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আত্মীয়-স্বজনরা। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে রাজশাহীর আকাশ।
ভাড়া বাসা থেকে সাগরকে নেয়া হয় রাজশাহী জেলা মুক্তিযোদ্ধা স্টেডিয়ামে। এরপর বিকেল সাড়ে চারটায় সেখানে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নেয়া হয় জেলা মুক্তিযোদ্ধা স্টেডিয়ামের পাশেই সপুরা গোরস্থানে। এই গোরস্থানে সমাধিত করা হয় স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলাম সাগরকে। গোরস্থানের সাথে রয়েছে মসজিদ। সেই মসজিদের পাশেই সাগরকে দাফন করা হয়েছে।
তৌকির ইসলামের বাবা তহুরুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। তবে প্রায় ২৫ বছর ধরে তহুরুল ইসলাম রাজশাহী শহরে বসবাস করে আসছেন। তার একমাত্র ছেলে সাগর বড় হয়েছেন রাজশাহীতেই। সাগর রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০১৪ সালে এসএসসি ও ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করে তিনি বিমানবাহিনীতে যোগ দেন।
এরমধ্যেই বছরখানেক আগে সাগর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রভাষককে বিয়ে করেন। প্রশিক্ষণের শেষ পর্যায়ে এসে সোমবার (২১জুলাই) একাই (সলো) যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে উড়েন সাগর। শেষ দিনই বিমানটি রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে সাগর প্রাণ হারান। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ৩২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানা গেছে।
কালের সমাজ//এসং.র.ন
আপনার মতামত লিখুন :