ঢাকা রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলাদেশ-ভারতের উদ্বেগ সত্ত্বেও

ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণে কাজ শুরু করল চীন

কালের সমাজ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৮:১৫ পিএম ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণে কাজ শুরু করল চীন

ব্রহ্মপুত্র নদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু করেছে চীন। হিমালয়ের পাদদেশে তিব্বতের ইয়ারলুং জাংবো নদীতে ৬০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই মেগা-বাঁধ নির্মাণের উদ্বোধন করা হয় শনিবার (১৯ জুলাই)। নদীটি ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত, যা দুই দেশের কোটি মানুষের জীবিকা ও পানির উৎস।


চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, তিব্বতের নিংচি এলাকায় বাঁধ নির্মাণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। রাষ্ট্রায়ত্ত পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।


২০২০ সালের নভেম্বরে প্রকল্পের পরিকল্পনার ঘোষণা দেয় বেইজিং। এক বছর পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্প অনুমোদন করে চীন সরকার। ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যেই প্রকল্পের গতি বাড়িয়েছে চীন।


তবে এই বাঁধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন ও তিব্বতের মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তারা বলছে, এমন একটি মেগা প্রকল্প পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল তিব্বত মালভূমিতে অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে।


চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রকল্পে মোট পাঁচটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। উৎপাদিত বিদ্যুৎ তিব্বতের স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি চীনের অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হবে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাঁধ নির্মিত হলে এটি বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবে চীনের মধ্যাঞ্চলের থ্রি গর্জেস বাঁধকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে নদীর ভাটির দেশ ভারত ও বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।


চলতি বছরের শুরুতে ভারত জানায়, তারা ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীনের এমন কর্মকাণ্ডে উদ্বিগ্ন এবং বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। নয়াদিল্লি চীনকে জানিয়ে দেয়, যাতে উজানের কোনো কর্মকাণ্ডে ভাটির দেশগুলোর স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।


চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য আশ্বস্ত করেছে, এই বাঁধের কারণে নিম্নপ্রবাহে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না এবং ভাটির দেশগুলোর সঙ্গে তারা যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে।


এদিকে, থ্রি গর্জেস বাঁধ নির্মাণকালে ১৪ লাখের বেশি মানুষকে তাদের স্থান থেকে সরিয়ে দিয়েছিল চীন। তবে ইয়াংসি নদীর তীরবর্তী এলাকার তুলনায় ইয়ারলুং জাংবো নদী এলাকার জনঘনত্ব তুলনামূলক কম। তবুও প্রকল্পে কত মানুষ স্থানচ্যুত হতে পারে, সে বিষয়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।


উল্লেখ্য, ২৫ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তিব্বত মালভূমি হিমবাহ ও ঝর্ণার পানির উৎস হিসেবে পরিচিত, যেখান থেকে ভারত, চীন ও ভুটানের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষ পানীয় জলের যোগান পায়। এমন একটি সংবেদনশীল অঞ্চলে চীনের মেগা বাঁধ প্রকল্প আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।


সূত্র: এএফপি
 

কালের সমাজ//এসং.র.ন

Side banner
Link copied!