ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

বাকৃবিতে নিষিদ্ধের মধ্যেও ছাত্ররাজনীতি চলছে প্রকাশ্যে

কালের সমাজ | সুমন গাজী, বাকৃবি প্রতিনিধি জুন ৩০, ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম বাকৃবিতে নিষিদ্ধের মধ্যেও ছাত্ররাজনীতি চলছে প্রকাশ্যে

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রশাসন সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ কয়েকটি রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন প্রকাশ্যেই দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে—এমনটাই অভিযোগ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।


বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষরে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও এক বছরের মাথায় সেই নির্দেশনা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার পরও কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় সংগঠনগুলো আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।


ফজলুল হক হল, আশরাফুল হক হল, শহীদ শামসুল হক হল এবং মাওলানা ভাসানী হলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সদস্য সংগ্রহ, ফরম বিতরণ ও শোডাউন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করেছেন, ছাত্রলীগের রাজনৈতিক ধারা অনুসরণ করে হল দখলেরও চেষ্টা চালানো হচ্ছে।


ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা প্রকাশ্যে মিছিল না করলেও দলীয় পরিচয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম, কুরআন বিতরণ, ইফতার মাহফিল এবং ফলচক্রের মতো আয়োজন করছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা শিক্ষার্থীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্যাম্পাসজুড়ে দলীয় দেয়াল লিখনও দেখা গেছে।


সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়নসহ বামধারার সংগঠনগুলোরও সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার পর তারা প্রথম প্রকাশ্যে মিছিল করে। এছাড়া বাকসু নির্বাচনের দাবিতে গণভোট কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মিছিল ও বিক্ষোভে তারা সক্রিয় রয়েছে।


রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা কখনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চাইনি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বের জন্য গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ চাই। রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা এখন কেবল একটি কাগজে সীমাবদ্ধ।”


বাকৃবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, “ছাত্রলীগের অপকর্মে ছাত্ররা রাজনীতি থেকে বিমুখ হয়েছে। সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রশাসন ছাত্রস্বার্থ উপেক্ষা করছে।”


ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, “শিবির কখনো শোডাউন বা সমাবেশ করেনি। কেবল শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করছে। তবে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সব সংগঠনের জন্য সমভাবে প্রয়োগ করতে হবে।”


ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সঞ্জয় রায় বলেন, “ছাত্র রাজনীতি একটি উচ্চতর হৃদয়বৃত্তি। প্রশাসনের উচিৎ দমনমূলক তৎপরতা বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা।”


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল। প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়া যেকোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম অননুমোদিত। নির্বাচনের পর বাকসু ও শিক্ষক সমিতি নির্বাচন নিয়ে ভাবা হবে।”


কালের সমাজ//র.ন

Side banner
Link copied!