ঢাকা মঙ্গলবার, ০৩ জুন, ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সুন্দরবনে ৯২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, বিপাকে পড়েছেন উপকূলের বনজীবীরা

কালের সমাজ | কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি মে ৩১, ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম সুন্দরবনে ৯২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, বিপাকে পড়েছেন উপকূলের বনজীবীরা

প্রাকৃতিক প্রজনন মৌসুমে বন্যপ্রাণী ও মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণের লক্ষ্যে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে পর্যটক ও বনজীবীদের প্রবেশে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৯২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বনাঞ্চলে সব ধরনের পর্যটন, মাছ ও কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে।


শনিবার (৩১ মে) খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় মাইকিং করে বনজীবীদের এই নির্দেশনা জানানো হয়। নিরাপত্তা জোরদার করেছে বন বিভাগ। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে কোনো পাস-পারমিট দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।


সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সাহিদ বলেন, “১ জুন থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। বন্যপ্রাণী শিকার ও বিষ দিয়ে মাছ ধরার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বন বিভাগ।”


বন বিভাগ জানায়, বর্ষাকালে সুন্দরবনের ২৫১ প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ে। প্রজনন সুরক্ষায় এই সময়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।


তবে এই নিষেধাজ্ঞায় চরম সংকটে পড়েছেন উপকূলীয় এলাকার জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালরা। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানাচ্ছেন অনেকেই।


কয়রার শাকবাড়িয়া নদীতীরে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক মাছ ধরার নৌকা তীরে বাঁধা। কেউ কেউ নৌকা মেরামতের কাজে ব্যস্ত।


স্থানীয় জেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, “মাছ, কাঁকড়া ও মধু সংগ্রহ করে আমাদের সংসার চলে। সুন্দরবন বন্ধ থাকলে আয় বন্ধ হয়ে যাবে। এলাকায় তেমন কাজ নেই। চিন্তায় আছি সংসার কীভাবে চলবে।”


একই গ্রামের জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, “সাগরে মাছ ধরা জেলেরা কিছু সহায়তা পেলেও আমরা যারা সুন্দরবনে কাজ করি, তাদের জন্য তেমন কিছু থাকে না। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। এই সময়ে সরকারি সাহায্য না পেলে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হবে।”


কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার জানান, “অনেক প্রকৃত জেলে কার্ডবিহীন থাকায় সরকারি সহায়তা পান না। যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত জেলেদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”


সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এজেড এম হাসানুর রহমান বলেন, “এই ৯২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় সুন্দরবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলে ও বনজীবীদের জন্য খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রতি পরিবারে মাসে ৪০ কেজি চাল প্রদানের প্রস্তাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে একটি তালিকা মৎস্য বিভাগে পাঠানো হয়েছে।”


উল্লেখ্য, কয়রায় সরকারি হিসেবে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১৩ হাজার ৫২৬ জন। তবে স্থানীয়দের মতে, এই সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে, যারা প্রজন্ম ধরে বনজীবী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।


কালের সমাজ//এসং//র.ন

Side banner
Link copied!