বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে দুইটি পৃথক প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ বুধবার (১৮ জুন) এই অর্থ সহায়নার অনুমোদন দেয়।
বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন জানান, "জ্বালানি খাতের স্থিতিশীলতা এবং পরিচ্ছন্ন বায়ু দেশের টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। এই প্রকল্প দুটি দেশের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক গতিশীলতায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।"
প্রথম প্রকল্পের আওতায়, ‘এনার্জি সেক্টর সিকিউরিটি এনহান্সমেন্ট’-এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার। এ অর্থায়ন পেট্রোবাংলাকে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পসুদে বেসরকারি বিনিয়োগ সংগ্রহে সহায়তা করবে, যাতে ২.১ বিলিয়ন ডলার পুঁজি বিনিয়োগের পথ সুগম হবে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানিতে সহায়ক ভূমিকা রাখা হবে, যা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ওলায়িনকা এডেবিরি বলেন, “এই প্রকল্প শিল্পখাত ও সাধারণ মানুষের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়ক হবে এবং এটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।”
দ্বিতীয় প্রকল্পটি ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট’। এতে ২৯০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের বায়ুমান পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন আনা হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অধীন আরও কার্যকর মনিটরিং স্টেশন স্থাপন করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বায়ুদূষণজনিত কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে অকালমৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ ৫৯ হাজার। পাশাপাশি কর্মঘণ্টা হারানোর ক্ষতির পরিমাণ ছিল জিডিপির প্রায় ৮.৩ শতাংশ।
এই প্রকল্পে পুরোনো ৪০০টি ডিজেলচালিত বাস সরিয়ে ইলেকট্রিক বাস চালু করা হবে। গঠন করা হবে পাঁচটি নতুন যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র এবং আধুনিকায়ন করা হবে দুটি অকার্যকর কেন্দ্র। সেই সঙ্গে ২০টি মোবাইল ভেহিকেল এমিশন ইউনিটও স্থাপন করা হবে, যার মাধ্যমে বছরে ২,৭০০ মেট্রিক টনের বেশি পিএম ২.৫ নির্গমন কমানো সম্ভব হবে।
বিশ্বব্যাংকের লিড এনভায়রনমেন্ট স্পেশালিস্ট আনা লুইসা গোমেস লিমা জানান, “এটি বায়ু মান উন্নয়নের দিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। এই প্রকল্প আঞ্চলিক সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে। এ পর্যন্ত সংস্থাটি বাংলাদেশকে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান ও স্বল্পসুদে ঋণ দিয়েছে।
কালের সমাজ//এসং.র.ন
আপনার মতামত লিখুন :