ঢাকা বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

ত্রুটিমুক্ত বন্ধকই মন্দ ঋণ নিরসনের বিকল্প

কালের সমাজ | তারিক আফজাল, অর্থনীতিবিদ জুন ১৭, ২০২৫, ০৭:০৬ পিএম ত্রুটিমুক্ত বন্ধকই মন্দ ঋণ নিরসনের বিকল্প

কালের আবর্তনে, সময়ের তাগিদে ও অর্থনীতির উন্নয়নে, শিল্পের অগ্রগতি, আমদানি ও রপ্তানি বৃদ্ধি, ব্যবসার প্রসার— সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ আজ সমাদৃত। এই প্রসারে ব্যাংকিং ঋণের সম্মিলন বরাবরই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, রাজনৈতিক প্রভাব, ইচ্ছাকৃত খেলাপি, বিচারের বিলম্বতা, মামলার জটিলতা ও কিছু অসৎ ব্যাংকার ও পরিচালক বারবার ঋণ প্রদান ও পরিশোধকে প্রভাবিত করেছেন।

 

এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ২০০৩ এবং অর্থ ঋণ আইনের পরিবর্তন থাকলেও কার্যত তা বাস্তবে রূপ পায়নি। বরং কতিপয় স্বেচ্ছাচারী ব্যাংক পর্ষদের উদ্যোগই ঋণকে মন্দ ঋণে পরিণত করেছে। বিগত দিনে ধারাবাহিকভাবে অপ্রয়োজনীয় ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রদান, রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত পরিচালক ও পরিবারের সম্পৃক্ততা এবং ব্যাংকারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক ঋণ প্রদানে বাধ্য করা মন্দ ঋণ বৃদ্ধিতে সহযোগিতামূলক ভূমিকা রেখেছে।

এই সন্ধিক্ষণে, মন্দ ঋণের প্রভাবে ব্যাংকিং খাতে তারল্যের সংকট, উপার্জন ঘাটতি, প্রভিশন সংকট ও মূলধন ঘাটতি যেন এক বিভীষিকা।

 

আশাব্যঞ্জক, বর্তমান সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মন্দ ঋণ উদ্ধারে সক্রিয়। চট্টগ্রামে অর্থ ঋণ বিচারক নিয়োগ ও আদালত বৃদ্ধি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা ইতিপূর্বে প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের বরাবর আমার আবেদন ছিল— কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।

এই কার্যক্রম আরও জোরদার হবে অর্থ ঋণ আইনের কিছু পরিবর্তন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ প্রদানের নীতির প্রবর্তন এবং সরকারি, বেসরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রদান ও খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে।

 

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি মন্দ ঋণ রয়েছে। এর প্রতিকার শুধু বিচার বা ঋণ উদ্ধারের কারণে খেলাপির পুনঃতফসিল অথবা ইনডেমনিটি নয়, কিছু দ্রুত কার্যক্রম নেওয়া যেতে পারে, যা সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারা পরিচালিত/সংশ্লিষ্ট অথবা সরাসরি সহায়তা থেকে আসতে পারে।

অভিজ্ঞতার আলোকে ও হিসাবের সমন্বয়ে বলা যায়, এই উল্লিখিত মন্দ ঋণের প্রায় ৪০ শতাংশ জামানত/বন্ধকী সম্পত্তির দ্বারা আচ্ছাদিত। এই ত্রুটিমুক্ত সম্পত্তি ও দীর্ঘমেয়াদি আমানত যাই হোক, তার বিক্রি ও দ্রুত সমন্বয় প্রায় ৪০ শতাংশ ঋণ উদ্ধার অর্জনে সক্ষম হবে। অতীত সময়ে বিবিধ কারণে এই সমাধান সম্ভব হয়নি— রাজনৈতিক প্রভাব, দালালদের উপদ্রব, চাঁদাবাজদের উপস্থিতি ও আদালতের স্থগিতাদেশ অকশন/মামলাকৃতের ওপর।

 

এই আদিপত্য মন্দ ঋণকে উৎসাহিত করেছে, উপার্জনক্ষমতা হ্রাস করেছে ও মূলধন ঘাটতির পিতা স্বরূপ আবির্ভূত হয়েছে।

 

নীতির পরিবর্তন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার/এনবিআর কালো টাকার মালিকদের এই বন্ধকীকৃত সম্পত্তি ক্রয়পূর্বক মন্দ ঋণসংবলিত ব্যাংকগুলোকে সরাসরি সহায়তা প্রদান ও তারল্যের সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবেন বলে আশা রাখি।

এই ‘নন-ব্যাংকিং অ্যাসেট’ বলে প্রচলিত সম্পদ দ্রুত বিক্রি রাতারাতি মন্দ ঋণের মাত্রাকে এক অভাবনীয় সমীকরণে নিয়ে আসবে।

পরবর্তী সময়ে, ঋণের নীতিমালা পরিবর্তন করে সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ক্ষুদ্র ঋণ, নারী উদ্যোক্তা ও কৃষি ঋণে উৎসাহ প্রদান করে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে বাধ্যতামূলক নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। যার ফলে উপার্জনক্ষমতা বৃদ্ধি, তারল্যের সমাধান ও মূলধন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।

আজ কতিপয় ব্যাংক একত্রীকরণের পথে হাঁটছে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি ফল নিরূপণে নীতির, আন্তরিকতার ও বাস্তবিক সফলতা অপরিহার্য। সেজন্য আমার আবেদন।

সকলের মঙ্গল কামনা, সবার উপরে দেশ।

—তারিক আফজাল

 

কালের সমাজ//এসং.র.ন

Side banner

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর

Link copied!