বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি পর্যালোচনা ও আগামী বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহের বিএফআরআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত দিনব্যাপী এ কর্মশালার উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন ধীরে ধীরে কমছে, যা উদ্বেগজনক। আগে যেখানে মুক্ত জলাশয় থেকে ৬০ শতাংশ মাছ আসত, এখন তা নেমে এসেছে ৪০ শতাংশে। এটি মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। মাছের প্রজনন ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত ট্যুরিজমের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। পাশাপাশি কৃষি কার্যক্রমে ব্যবহৃত কীটনাশক মাছের বাস্তুতন্ত্রে কী প্রভাব ফেলছে, সেটি নিয়েও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “অতিরিক্ত আহরণের কারণে সমুদ্রেও মাছের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের টেকসই উপায়ে মাছ আহরণ করতে হবে, নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, বিএফডিসি চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী, বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার এবং মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ। কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র।
সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, “নতুন ও উন্নত জাতের মাছের প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের কারণে নদ-নদী ও জলাশয়গুলো ঝুঁকির মুখে পড়ছে। এ অবস্থায় সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো সময়ের দাবি।” তিনি মৎস্য গবেষকদের যথাযথ সম্মান প্রদানের জন্য বেতন কাঠামো বৃদ্ধির সুপারিশ করারও আশ্বাস দেন।
কর্মশালায় বিএফআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম গত এক বছরের গবেষণা অগ্রগতি উপস্থাপন করেন। এতে উল্লেখ করা হয়—
সুবর্ণ রুই উদ্ভাবন
দেশীয় প্রজাতির সংরক্ষণ ও প্রজননে সাফল্য
ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনা
রাঁজপুটি ও বটম ক্লিন পদ্ধতি
ডিএনএ বারকোডিংয়ে ৭৫টি প্রজাতি শনাক্ত
মাছের ভ্যাকসিন ও চিংড়ি চাষ প্রযুক্তি উন্নয়নসহ নানা অগ্রগতি
দিনব্যাপী আয়োজনে ৫টি কেন্দ্র ও ৫টি উপকেন্দ্র থেকে আসা গবেষকরা ৫০টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এছাড়া মাঠ পরিদর্শনে সচিব জায়ান্ট পাঙ্গাস, মহাশোল মাছের ব্রুড উন্নয়ন, দেশীয় মাছ সংরক্ষণ, কুঁচিয়া ও কৈ মাছের ব্রিডিং প্রকল্পসহ চলমান গবেষণা কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। গবেষকদের মতে, মেকং নদীর জায়ান্ট পাঙ্গাস দেশে সফলভাবে চাষ হলে মৎস্য খাতে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব গবেষণা শুধু উৎপাদন বাড়াবে না, বরং জলজ জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :