রাজধানীতে শিক্ষক-কর্মচারীদের উপর পুলিশি লাঠিপেটা, টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহারের ঘটনার প্রতিবাদে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রেখে রাস্তায় নেমে আসেন। এতে উপজেলাজুড়ে অচল হয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা এসে বিদ্যালয় খোলা পেলেও শ্রেণিকক্ষে কোনো শিক্ষক নেই, পাঠদান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় “বেসরকারি স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী ঐক্যজোট” এর ব্যানারে আয়োজিত এই মানববন্ধনে উপজেলার সকল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধন চলাকালীন জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের একটি বড় অংশে শিক্ষকদের জড়ো হতে দেখা যায়। সকাল থেকেই শিক্ষকরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেন মহাসড়কে। তাদের কণ্ঠে ছিল ক্ষোভ, হতাশা এবং ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা। শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচির কারণে উপজেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। স্কুল-কলেজে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ফিরে যায় হতাশ হয়ে। পুরো উপজেলায় পাঠদান কার্যক্রম একপ্রকার অচল হয়ে পড়ে।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মঞ্চে বক্তব্য রাখেন কালাই ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম, থুপসাড়া সেলিমিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মতিয়র রহমান,মোলামগাড়ীহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন, হাতিয়র কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক শামীম রেজাও সহকারী অধ্যাপক মাওলানা সেলিম রেজা এবং কালাই মহিলা বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল করিম। তাঁদের বক্তব্যে ছিল দুঃখ, ক্ষোভ, আপোষহীন প্রত্যাশা এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের অটল দৃঢ়তা।
কালাই ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক সমাজ কোনো বিশৃঙ্খলা চায় না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অধিকার আদায়ের চেষ্টা করছি কিন্তু আমাদের সেই শান্তিপূর্ণতার জবাব এসেছে লাঠিচার্জ আর টিয়ারসেলে। এটা শুধু অপমানজনক নয়, শিক্ষক জাতির যে মর্যাদা বহন করে, তার পরিপন্থী।
থুপসাড়া সেলিমিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মতিয়র রহমান জানান, জাতীয়করণ আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। অথচ সেই দাবির পক্ষে রাস্তায় দাঁড়ালে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমরা কি এভাবেই রাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্মান পাবো?
হাতিয়র কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক শামিম রেজা বলেন,শিক্ষকদের নির্যাতন মানেই জাতির ভবিষ্যৎকে অপমান করা। আমরা কোনো সন্ত্রাসী নই, দেশের আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর। অথচ আমাদের আজ লাঠিপেটা খেতে হচ্ছে!
আবেগঘন কন্ঠে আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা সেলিম রেজা বলেন, আজ মনে হচ্ছে আমাদেরই ছাত্ররা আমাদের ওপর লাঠি তুলছে। যাদের হাতে আমরা বই তুলে দিয়েছিলাম, জ্ঞানের আলো দেখিয়েছিলাম, তারাই আজ আমাদের চোখে গ্যাস ছেড়ে মারছে। এটা কেবল একটা ঘটনার প্রতিবাদ নয়, এটা শিক্ষক সমাজের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
বিক্ষোভ শেষে শিক্ষকরা কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে একটি লিখিত স্মারকলিপি প্রদান করেন। সেখানে তাঁদের দাবি ছিল,ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত, দায়ীদের শাস্তি, শিক্ষকদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ।
এ সময় কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন, আমি শিক্ষক নেতাদের কাছ থেকে তাঁদের দাবির বিষয়ে স্মারকলিপি পেয়েছি।প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকুক এবং শিক্ষকরা যেন সম্মানজনকভাবে তাঁদের দাবি আদায়ের পথ খুঁজে পান। আশা করি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দ্রুত শিক্ষকদের দাবির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি সম্মানজনক সমাধান দেবেন।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :