ঢাকা রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২

মানিকগঞ্জে অনিয়মে গড়ে ওঠা ‘ডেরা রিসোর্ট’: জমি অধিগ্রহণ ও লাইসেন্সে ত্রুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক | সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৭:২১ পিএম মানিকগঞ্জে অনিয়মে গড়ে ওঠা ‘ডেরা রিসোর্ট’: জমি অধিগ্রহণ ও লাইসেন্সে ত্রুটি

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় অবস্থিত বিলাসবহুল ‘ডেরা রিসোর্ট ও স্পা’-র বিষয়ে জেলা প্রশাসনের তদন্তে বেশ কয়েকটি অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। রিসোর্টটি স্থানীয় কৃষিজমি দখল করে নির্মাণ করা হলেও অনেক জমির মালিক এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি। পাশাপাশি, রিসোর্টটির ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স হালনাগাদ নয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও মেয়াদোত্তীর্ণ। অনুমোদনের সময় আরোপিত শর্তগুলোও পুরোপুরি মানা হয়নি।

জেলা প্রশাসনের সম্প্রতি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনের কপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব শেখ রাশেদউজ্জামান ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

২০২২ সালের ৫ জুলাই উদ্বোধন হওয়া রিসোর্টটিতে বিভিন্ন কটেজ, সুইমিং পুল, স্পা, রেস্তোরাঁ ও খেলার মাঠ রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রিসোর্ট এলাকায় মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম চালানো হয়। এর আগে, ২০২৩ সালের ৩ মার্চ প্রথম আলোতে ‘চাপে ফেলে জমি ক্রয়, কৃষকরা পাননি টাকা’ শিরোনামে বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছিল।

জনবহুল এলাকায় গড়ে তোলা রিসোর্টটির ফায়ার সার্ভিসের হালনাগাদ লাইসেন্স (অনুমোদন) নেই

তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাজমুল হাসান খানকে প্রধান করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০-১১ সালে গরুর খামার স্থাপনের নাম করে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। পরে ভীতি দেখিয়ে জমি দখল করা হয় এবং তিন ফসলি জমি ভরাট করে রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এখনো অনেক জমি মালিক তাদের ক্ষতিপূরণ পাননি।

রিসোর্টের পাশের একটি সেতু ভরাট হওয়ার কারণে আশপাশের কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অনুমোদিত নকশার তুলনায় কক্ষসংখ্যা বেশি এবং এসটিপি নির্মাণ হয়নি। ফায়ার লাইসেন্সও দুই বছর ধরে নবায়ন হয়নি।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পুরানগ্রাম এলাকায় অবস্থিত ‘ডেরা রিসোর্ট ও স্পা’। সম্প্রতি তোলা

রিসোর্টের মালিক হিসেবে মো. শেখ সাদী, জেসিয়া আফরিন ও মো. রবিউল ইবনে কামরুলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে মো. শেখ সাদী যোগাযোগে আসেননি। অপারেশন ম্যানেজার ওমর ফারুক জানিয়েছেন, ফায়ার লাইসেন্সের আবেদন করা হয়েছে এবং পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়নের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হবে।

জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানিয়েছেন, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর রিসোর্টের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “গ্রামের তিন ফসলি জমি বিনষ্ট করে রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। যদি এটি অন্য কোনো পর্যটন এলাকায় হতো, তবে স্থানীয় জনসাধারণের শান্তি বিঘ্নিত হত না।”

কালের সমাজ // র.ন

Side banner

অপরাধ বিভাগের আরো খবর

Link copied!