সকালের আলো ফোটার আগেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের পিপুলবাড়িয়া বাজার। পাঁচ রাস্তার এই মোড়টি উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বার—ভোর থেকেই যানবাহনের সারি, পথচারীদের ভিড়। কিন্তু এই ব্যস্ত মোড়ে একজন মানুষ প্রতিদিন নিজের শরীরের অক্ষমতাকে ভুলে যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যস্ত থাকেন। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী শরিফ খান—মানবতার এক অনন্য প্রতীক।
গত ২৮ বছর ধরে বিনা বেতনে, বিনা স্বীকৃতিতে স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন শরিফ। দুই হাতে আঙ্গুল না থাকা, দুই পা নিয়ে চলতে কষ্ট ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, কিন্তু মনোবলে দৃঢ়। প্রতিদিন সকাল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি নিজ দায়িত্বে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করেন, পথচারীদের পারাপারে সহায়তা করেন।
শরিফ খান বলেন, “আমি ভিক্ষা করে খেতে চাই না। তাই যতটুকু পারি, মানুষের সেবা করতে চাই। কেউ কেউ ৫-১০ টাকা দেয়, সেই টাকাতেই চলে আমার দিন।”
এই দায়িত্ব পালনের সময় শরিফ খানকে নানারকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় চালকদের রূঢ় আচরণ, ধুলোবালি, গরম—সবকিছুই সহ্য করেন তিনি। তবুও তার চোখে ক্লান্তি নয়, আছে গর্ব ও তৃপ্তি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল বলেন,“শরিফ ভাই না থাকলে পিপুলবাড়িয়া বাজারে প্রচণ্ড যানজট লেগে যায়। সবাই ওনাকে খুব সম্মান করে, কারণ তিনি বিনা স্বার্থে কাজ করেন।”
পাঁচ রাস্তার এই মোড়টি শুধু একটি বাজার নয়—উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের জন্য এটি একটি জীবন্ত সংযোগ কেন্দ্র। তাই শরিফ খানের ভূমিকা অনেক বড়। তিনি প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন, অথচ নেই কোনো সরকারি সহায়তা বা ভাতা।
শরিফ খানের একটাই আবেদন— “আমি চাই সরকার আমাকে ট্রাফিক হিসেবে স্বীকৃতি দিক। একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিক, যেন সম্মানের সঙ্গে সেবা করতে পারি।”
তার এই সংগ্রামী জীবন সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণার গল্প। যেখানে অনেকেই সুযোগের অভাবে বা প্রতিবন্ধকতায় পিছিয়ে যান, সেখানে শরিফ খান প্রমাণ করেছেন
মানবসেবার ইচ্ছা থাকলে অক্ষমতাও শক্তিতে পরিণত হয়।
কালের সমাজ/ সাএ
আপনার মতামত লিখুন :