আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ভেতরে যেমন সমন্বয় ও অংশীদারিত্বের আলোচনা চলছে, তেমনি একাধিক ইসলামী দল, এনসিপি ও বিকল্প শক্তি নিজেদের মতো করে সরকারবিরোধী জোট গঠনের পথে এগোচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি সম্প্রতি গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে গুলশানে বৈঠক করেছে। সেখানে জাতীয় সরকার গঠন, নির্বাচনী সহাবস্থান এবং সাংগঠনিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার রূপরেখা উপস্থাপন করে আশ্বস্ত করেছে যে আন্দোলনের শরিকদের নিয়েই নির্বাচনে যাবে এবং সরকার গঠনের পর সবাইকে ক্ষমতার অংশীদার করা হবে। এ বৈঠকে বিএনপির পক্ষে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। অপরদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, হাসনাত কাইয়ূম ও শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
অন্যদিকে, বিএনপির বাইরে থাকা জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, ফরায়েজী আন্দোলন, এলডিপি, এবি পার্টি ও এনসিপি নিজেদের মতো করে একটি শক্তিশালী ইসলামী জোট গঠনের চেষ্টা করছে। জানা যায়, এই দলগুলো চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে একত্র হওয়ার চেষ্টা করছে। জানুয়ারিতে জামায়াতের আমির ও চরমোনাই পীরের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাক্ষাৎকে এই ঐক্য প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সম্প্রতি ২৮ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত সমাবেশে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সহকারী সেক্রেটারিরা। এ সমাবেশে জামায়াত নেতাদের অংশগ্রহণকে রাজনৈতিক সৌজন্য হিসেবে ব্যাখ্যা করা হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি আসন্ন নির্বাচনে বৃহত্তর ইসলামিক ঐক্যেরই ইঙ্গিত বহন করে।
বৃহত্তর এই জোট গঠনের উদ্দেশ্য হলো—সমঝোতার ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগি করে একটি শক্তিশালী নির্বাচনমুখী ঐক্য গড়া, যেখানে এক আসনে একটি মাত্র দলের প্রার্থী থাকবে। ইসলামী আন্দোলনের আমির রেজাউল করীম মনে করেন, কার্যকর এই ঐক্য হলে রাষ্ট্রক্ষমতা ইসলামপন্থীদের হাতে যেতে পারে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, খুব শিগগিরই ঐক্য চূড়ান্ত হবে এবং কওমি ধারার আলেমদের সঙ্গে পুরনো বিরোধও নিরসন হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মেরুকরণ শুধু বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরির কৌশল নয়, বরং জাতীয় সরকার গঠনের বিকল্প রূপরেখাও তৈরি করছে। এতে জাতীয় সংসদে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা এবং প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। এতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াও ক্ষমতার অংশীদার হওয়া সম্ভব হবে।
সূত্রমতে, অংশীদার দলগুলো একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে: নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা করে নির্বাচন আয়োজন, আংশিক নির্বাচন কমিশন সংস্কার, শাপলা চত্বরের ঘটনার বিচার, উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন, ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়, জাতীয় সরকার গঠনে প্রস্তুতি এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
প্রথম ধাপে গণঅধিকার পরিষদের মাধ্যমে একটি নির্বাচন, পরে স্থানীয় নির্বাচন এবং সবশেষে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব রয়েছে। বিএনপির ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকছে।
তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে এনসিপির কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে। এতে তারা বিকল্প কৌশল খুঁজছে এবং সরকারবিরোধী বড় জোটে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ফেরাতে নতুনভাবে সক্রিয় হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন সমীকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিএনপি তার নেতৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টায়, আর অন্যদিকে ইসলামপন্থী দলগুলো জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্য সামনে রেখে বিকল্প রাজনৈতিক মেরুকরণে সক্রিয়। এই প্রেক্ষাপটে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের অবস্থান যে কতটা প্রভাব বিস্তার করবে—তা নির্ধারণ করবে সময়।
জোট নয়, বরং সমঝোতার ভিত্তিতে বৃহত্তর ইসলামিক ঐক্য গড়ছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ২৮ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা—নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সহকারী সেক্রেটারিরা উপস্থিত ছিলেন, যা রাজনৈতিক সৌজন্যের অংশ হলেও ঐক্যের স্পষ্ট বার্তা বহন করে। জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের বিরোধ মিটিয়ে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে এখন সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই বৃহত্তর জোটে সম্ভাব্য দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, ফরায়েজী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি। ঐক্যের লক্ষ্য হিসেবে সমঝোতার ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগির চিন্তা চলছে, যাতে এক আসনে একটি মাত্র দলের প্রার্থী দাঁড়ায়। ইসলামী আন্দোলনের আমির রেজাউল করীম বিশ্বাস করেন, কার্যকর ঐক্য হলে রাষ্ট্রক্ষমতা ইসলামপন্থীদের হাতেই আসবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, কওমি ধারার আলেমদের সঙ্গে পুরনো বিরোধও এখন নিরসন হয়েছে এবং শিগগিরই সমঝোতা চূড়ান্ত হবে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বলা হচ্ছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং আগামী বছরের শুরু থেকে মাঝামাঝি যেকোনো সময় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কালের সমাজ/ সাএ
আপনার মতামত লিখুন :