নাবি জাতের ব্রি-২৯ ধান মাঠে পেকে উঠেছে। ঘরে তোলার প্রস্তুতি চলছিল। কৃষক ভাবছিলেন এবার সোনালি ফসল ঘরে উঠবে, মুখে ফুটবে হাসি। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন ছোবল মারল প্রকৃতি। আকস্মিক বন্যায় চলনবিলঘেষা সিরাজগঞ্জ ও নাটোরের বিস্তীর্ণ মাঠ পানির নিচে চলে গেছে। সবকিছু হারিয়ে এখন কৃষকদের চোখে জল আর মুখে দীর্ঘশ্বাস।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর এবং নাটোরের সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলার বহু মাঠ এখন বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। সেখানকার কৃষকরা কোমর পানি পেরিয়ে, কেউ কেউ নৌকায় ভাসিয়ে, আবার কেউ বুক পানিতে দাঁড়িয়ে ডুবে যাওয়া ধান সংগ্রহ করছেন। মুখে শুধু একটাই কথা-”ধান নয়, হারিয়ে ফেলেছি আমাদের স্বপ্ন”।
কৃষক টিটু তালুকদার কালের সমাজকে বলেন, “ধান কেবল কাটাই বাকি ছিল। এরই মধ্যে পানি উঠে গেল। বৃষ্টি তো হতোই, কিন্তু এমন হঠাৎ পানি আমরা কখনো দেখিনি।”
শুধু কৃষকরাই নয়, বিপদে পড়েছেন শ্রমিকরাও। জমিতে পানি উঠে যাওয়ায় ধান কাটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে কেউ হাত ভাঙছেন, কেউ আবার আহত হচ্ছেন পানিতে পড়ে। একজন শ্রমিক জানান, “পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাটতে হয়। পড়ে যাই। কয়েকজনের পা কেটে গেছে ।”
এই সংকটে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে কৃষি বিভাগ। মাঠপর্যায়ে চলছে নিয়মিত নজরদারি ও তদারকি। এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা নিরবচ্ছিন্ন মাঠ পর্যবেক্ষণ করছি। কিছু ধান এখনও রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে। তবে পানি দ্রুত না নামলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বড় হবে। কৃষকদের তালিকা তৈরি হচ্ছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রণোদনার আওতায় আসতে পারেন।”
তবুও কৃষকের প্রত্যাশা এখন একটাই-সরকার পাশে দাঁড়াক। সহায়তা দিলে হয়তো আবারও নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। সরকারি সহায়তা না পেলে সেই স্বপ্নের ধান হারানোর ক্ষত সহজে শুকোবে না।
কালের সমাজ/হাকা
আপনার মতামত লিখুন :