ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২

খুলে দেওয়া হলো ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ের ১৮ কিলোমিটার

কালের সমাজ গাজীপুর প্রতিনিধি আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম খুলে দেওয়া হলো ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ের ১৮ কিলোমিটার

বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা  মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আমাদের দেশে দক্ষ প্রকৌশলী না থাকায় বাইরে থেকে লোক এসে সড়ক, রেলপথ বানিয়ে দিয়ে যায়। অথচ আমাদের দেশে বুয়েট থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ার বের হয়। এটা অনেক লজ্জার বিষয়। সুতারাং বিদেশীদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশে দক্ষ প্রকৌশলী তৈরীর চেষ্টা করতে হবে।

রবিবার (২৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া-বাইপাস এলাকায় ভোগড়া থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার ঢাকা বাইপাস সড়কের ১৮ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ের (এন-১০৫) প্রথম ধাপের ১৮ কিলোমিটার অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনের আগে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে এই অংশ পরীক্ষামূলকভাবে তিন দিন টোল ফ্রি চালু করা হয়।

উপদেষ্টা আরো বলেন, আর কতকাল বাইরে থেকে লোক এসে আমাদের সড়ক বানিয়ে দিয়ে যাবে। আর কতকাল বাইরে থেকে লোক এসে আমাদের সেতু বানিয়ে দিয়ে যাবে? রেলপথ বানিয়ে দিয়ে যাবে? রেলের জন্য একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর ওই রাস্তাতে। আমি বললাম এটার দরকার নেই। ওখানে একটা রেলের অলরেডি রাস্তা আছে। সেখানে এত হাজার হাজার কিলোমিটার রেল পথ হল এখন তোমরা এটার ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে পারবা না?  মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। তাহলে আমাদের এত ইঞ্জিনিয়ার থেকে লাভ কি? আমাদের এত প্রকৌশলী থেকে লাভ কি?  ওই জন্যই প্রকৌশলীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রকৌশলীরা এ কারণেই বেকার। বুয়েট থেকে পাস করে একটা ছেলে যখন একটা মেধাবী ছাত্র হয় তখন এটা জাতির জন্য লজ্জার। এজন্য ইঞ্জিনিয়ারদেরক বলবো নিজেরাই একটি রাস্তা করে দেখান, নিজেরা একটা পাওয়ার প্লান্ট করে দেখান, নিজেরা একটা ট্রান্সমিশন লাইন করে দেখান। এটাই আমাদের উত্তরণের পথ। আমাদেরকে বিদেশ নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, সেতু মন্ত্রণালয় থেকে আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা একটি মাল্টি মডেল ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান করতেছি। এজন্য প্ল্যানের মধ্যে সবকিছুকে একত্র করে দেখব। সড়ক পথকে দেখব, রেলপথকে দেখব, নদী পথকে দেখব। আমরা সবগুলোকে একত্র করব। যেখানে যেটার উপযুক্ত আমরা সেখানেই জোর দিব। যেখানে নদীপথের মুভমেন্ট সহজতর হবে সেখানে নদীপথের উপর জোর দেওয়া হবে। যেখানে রেলের যাতায়াতের জন্য সহজতর হবে সেখানে আমরা রেলের উপর জোর দিব। শুধুমাত্র সড়কের উপর দিয়ে নির্ভরতা আমাদের কমাতে হবে। আমাদের দেশে তো জায়গা নেই। এই যে ভূমি অধিগ্রহণ এটা একটা দীর্ঘ এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এজন্য আমাদের সড়কের উপর যে চাপ এর থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। আশেপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশের সড়কের নির্মাণ ব্যায় অনেক বেশি, এগুলো কমাতে হবে। আপনারা জানেন যে রাস্তাঘাট এটা দুর্নীতির একটা বড় ক্ষেত্র। দুর্নীতি কমালে এবং প্রকৌশলে যারা আছেন তারা যদি দায়িত্ব নিয়ে করেন তাহলে বিশ্বাস ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যয় কমানো সম্ভব। সড়ক খাতে বর্তমানে যে অব্যবস্থা চলতেছে এই অব্যবস্থা থেকে আমাদেরকে পরিত্রান পেতে হবে। এক হচ্ছে সড়কের উপর আমাদের নির্ভরতা কমাতে হবে। অন্যান্য যেসব যাতায়াতের মাধ্যম আছে রেলপথ, নদী পথ এবং বিমান এসবগুলোর ব্যবহার বাড়াতে হবে। ঢাকা শহরে বাইপাস ব্যবহার করতে হবে যাতে বড় বড় শহরকে যানজট মুক্ত করতে পারি। পরে উপদেষ্টা ফিতা কেটে মহাসড়কের টুুল প্লাজা ও প্রকল্প উদ্বোধন করেন।

যানবাহনের ধরন অনুযায়ী টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ কিলোমিটার অংশে আংশিকভাবে টোল আদায় শুরু হচ্ছে। টোল হার হচ্ছে- বড় ট্রাক (ট্রেলার, ৬-এক্সেল, ১৫-২৫ টন) ৭৪০ টাকা, ভারী ট্রাক (২-৩ এক্সেল, ৭+ টন) ৬১০টাকা, মাঝারি ট্রাক (৫-৭ টন) ৪০০ টাকা, বড় বাস (৩১ সিট বা তদূর্ধ্ব) ৩১০ টাকা, ছোট ট্রাক (৩ টন) ২৬০ টাকা, ছোট বাস (৩১ সিটের নিচে) ২১০ টাকা, মাইক্রোবাস ১৯০ টাকা, পিকআপ, জিপ, রেকার, ক্রেন (৩ টন) ১৮০ টাকা ও সেডান প্রাইভেটকার ১৫০ টাকা।

প্রকল্পের সেফটি প্রকৌশলী ফারদিন ইমাম জানান, ১৮ কিলোমিটার অংশের নির্মাণ প্রায় শেষ, তাই যান চলাচলের জন্য তা খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে নিরাপত্তা ও গতি নিশ্চিত করতে এক্সপ্রেসওয়েতে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই অংশে কোনো ইউটার্ন থাকবে না বলেও জানানো হয়। এ সড়কের বিভিন্ন অংশে দুইটি রেলওয়ে ওভারপাস (ধীরাশ্রম ও মীরের বাজার) এবং কাঞ্চন, নাগদা , উলুখোলাসহ ৮টি সেতু নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কাঞ্চন হতে ভুলতা পর্যন্ত অংশে টোল সড়কের নির্মাণকাজ চলমান আছে। ভুলতা থেকে মদনপুর পর্যন্ত অংশে মাটি ভরাটসহ অন্যান্য কাজ চলমান রয়েছে।

আয়োজকরা জানান, পিপিপি ভিত্তিতে জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক ঢাকা-বাইপাস চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি গাজীপুরের ভোগড়া থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক প্রকল্প। এ সড়কের ডিজাইন, বিল্ড, ফিন্যান্স, অপারেট এবং মেইনটেন্যান্স উইঋঙঞ মডেল অনুসরণে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করে। প্রকল্পের আওতায় রবিবার ১৮ কিলোমিটার অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো।

সড়ক ব্যবহারকারী ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের ফলে ঢাকা শহরে প্রবেশ ব্যতিরেকেই পণ্যবাহী যানবাহন কম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর হতে ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে যাতায়াত করতে পারবে। এতে একইসাথে ঢাকা শহরের যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস পাবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের জন্য একটি বিকল্প রুট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ঢাকা বাইপাস সড়ক প্রকল্পের চীফ অপারেটিং অফিসার শফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, সড়কে প্রাথমিক ব্যায় ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে হয়তো পরিশেষে আমাদের ব্যায় বাড়বে কিছুটা। এখন পর্যন্ত ১৮ কিলো মিটার সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে, আরো ৪২ কিলো মিটার পর্যন্ত  সার্ভিস লোড শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের অগ্রগতি ৭৫%। নারায়ণগঞ্জ অংশে ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি শিফটিং ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হলে আগামী বছরের জুন মাসে প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ শেষে হয়ে যাবে। মানুষ যে কষ্ট ভোগ করতো এই সড়ক না হওয়ার কারণে। এই ১৮ কিলো মিটার চালু হওয়ার পর এটা তো সম্পূর্ণ সুবিধা পাবেই, তারা এখান থেকে মদনপুর পর্যন্ত আগে যেখানে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা লাগতো, এখন মাত্র ৪০ মিনিটে যেতে পারবে। ১৮ কিলো মিটার দিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে কাঞ্চন পর্যন্ত চলে যেতে পারবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শরফ উদ্দিন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএিমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান, জেলা প্রশাসক (ডিসি) নাফিসা আরেফীনসহ প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

 

কালের সমাজ/ গা.আ./ সাএ
 

Side banner

পথে-প্রান্তরে বিভাগের আরো খবর

Link copied!