খুলনা জেলা পরিষদের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এমডি আসলাম হোসেনকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ ও বিতর্ক চলছে।
সহকর্মীদের সঙ্গে বিবাদ, অনৈতিক আর্থিক লেনদেন, রাজনৈতিক কটুক্তি, এমনকি অফিসের নথিপত্র বাইরে পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।একাধিক সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ হবার পরো টনক নড়ছে না জেলা পরিষদের কর্কমর্তমদের।
কিভাবে নিয়োগ পেলেন আসলাম
২০০৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এমডি আসলাম হোসেনকে খুলনা জেলা পরিষদে নিম্নমান সহকারী-কাম-মুদ্রাক্ষরিক/কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিভাগীয় কমিশনারের তদন্তে বেরিয়ে আসে, তিনি বাছাই পরীক্ষায় ২য় স্থান অধিকার করলেও তাকে ১ম স্থান দেখানো হয়। ফলে স্থানীয় সরকার বিভাগ ওই বছরের ৩ ডিসেম্বর স্মারক নং স্থাসবি/নিয়োগ-৪/২০০৪/২৯০০ অনুযায়ী তার নিয়োগ বাতিল করে প্রকৃত ১ম স্থান অধিকারী মো. গফফার হোসেনকে নিয়োগ দেওয়ার আদেশ দেয়।
নিয়োগ বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে খুলনা জেলা জজ আদালতে (দে: ১৭৬/১৮) মামলা দায়ের করেন আসলাম। মামলায় তার পক্ষে রায় হলে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ আপিল (দে: আপিল ১৬/২০০৯) করে। খুলনার যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত ওই আপিল মামলা খারিজ করে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে। পরে জেলা পরিষদের প্রাক্তন সচিব মো. নুরুল হক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকাকালীন ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই আসলামকে স্বপদে কাজে যোগদানের অনুমতি দেন।
বিতর্কের শুরু
কাজে যোগদানের পর থেকেই আসলাম নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। জেলা পরিষদের ঠিকাদারদের সঙ্গে তার নিয়মিত সংঘর্ষ লেগেই থাকত। ২০০৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনজন ঠিকাদারের সঙ্গে মারামারির ঘটনায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। একই বছরের ১৬ নভেম্বর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান বিশ্বাস অফিসের শৃঙ্খলা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে আসলামের বদলির জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেন।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি অফিসে সহকর্মীদের কক্ষে প্রবেশ করে নথিপত্র বের করে বাইরে ফাঁস করতেন। তার উপস্থিতিতে সহকর্মীরা আতঙ্কে থাকতেন। অফিসে আসা সেবা প্রত্যাশীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে।
রাজনৈতিক কটুক্তির বিষয়েও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তিনি বিএনপিকে নিয়ে কটূক্তি করায় তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে একবার তার চাকরিও চলে যায়। তবে আদালতের রায়ে তিনি আবার চাকরি ফিরে পান। ২০১২ সালে তাকে খুলনা থেকে যশোর জেলা পরিষদে বদলি করা হয়। সেখান থেকে চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, পরে রাজশাহী ও ঝিনাইদহ জেলা পরিষদে বদলি হন। অবশেষে ২০২৪ সালে আবারও খুলনায় যোগ দেন।
সাম্প্রতিক অভিযোগ
খুলনায় ফিরে আবারও তিনি নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। চলতি বছরের মে মাসে চাকরির প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন এক তরুণী। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে খুলনা মহানগর বিএনপির সিনিয়র নেতা শাহজী কামাল টিপুর সামনে বিএনপির রাজনীতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রশাসকের কাছে অভিযোগ জানানো হলে তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়।
তদন্ত প্রতিবেদনে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার উল্লেখ করেন, অফিস চলাকালীন সময়ে রাজনৈতিক বক্তব্য ও কটুক্তি প্রদান স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ১৯৯০ এর আইন ৩৭(২)(ক) অনুযায়ী পরিষদের সুনাম ও চাকরি বিধিমালার পরিপন্থী।
আসলামের বক্তব্য
এমডি আসলাম হোসেন বলেন, “সবই পরিকল্পিত। এসবের কোনো সত্যতা নেই। চাকরির শুরুতে কিছু সমস্যা হয়েছিল, পরে মামলা করে আমি চাকরি ফিরে পাই। আমাকে বারবার বদলি করা হয়েছে ঠিকই, তবে আমি প্রতিবাদী হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ আনা হচ্ছে।”
জনমনে প্রশ্ন
স্থানীয়দের প্রশ্ন, একের পর এক অভিযোগ সত্ত্বেও কেন তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? সরকারের এমন সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিতর্কিত এ কর্মচারীর খুঁটির জোর কোথায়? আর সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের দায়ে ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব কেন—এমন প্রশ্ন এখন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
কালের সমাজ/ মা.বি./সাএ
আপনার মতামত লিখুন :