ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২

শরীয়তপুর- গোসাইরহাটে টিআর- কবিখায় অনিয়ম, এক ওয়ার্ডেই ৯ প্রকাল্প

কালের সমাজ আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৩:৫৪ পিএম শরীয়তপুর- গোসাইরহাটে টিআর- কবিখায় অনিয়ম, এক ওয়ার্ডেই ৯ প্রকাল্প

শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে কাবিখা, কাবিটা ও টিআর প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কাগজে-কলমে, সাইনবোর্ড, নামফলকে কাজ দেখালেও বাস্তবে তার কোনো চিহ্ন নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ‘কাবিখা’ ও ‘কাবিটা’ কর্মসূচির আওতায় বাস্তবায়নাধীন বেশির ভাগ প্রকল্পেই দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্যকর অনিয়ম ও দুর্নীতির।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দপ্তরে ঘুষ না দিলে কাজ শুরু করা যায় না।সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গোসাইরহাটে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নগদ অর্থ, গম ও চাল মিলিয়ে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক অর্থই খরচ হচ্ছে অন্যখাতে।স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সভাপতিরা অভিযোগ করছেন, প্রতি লাখ টাকায় ১৫-২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বলেন, কোনো কাজ শুরু করতে চাইলে আগে টাকা জমা দিতে হয়, না দিলে ফাইল আটকে রাখে।কুচাইপট্রি ইউপি সদস্য রুস্তম সরদার বলেন, আমার প্রকল্পের টাকার ১৫ শতাংশ অফিসে রেখে দেওয়া হয়েছে। অফিস সহকারী সজল সাহা ও বদিয়ার রহমান এতে জড়িত।নলমুড়ি ইউনিয়নের পাঁচকাঠি গ্রামের একটি রাস্তা প্রকল্পে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয়দের দাবি, সেখানে কোনো কাজই হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল আকন বলেন, এই রাস্তায় এক আঁটি মাটিও ফেলা হয়নি।এ বিষয়ে ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান ঢালী বলেন, একটা খাল ভরাট করেছি।
চরমনপুরা এমরানিয়া নূরানি মাদ্রাসা মাঠ ভরাট প্রকল্পেও একই অভিযোগ। সভাপতি সোবাহান বাবুর্চি বলেন, ৩ লাখ টাকার প্রকল্পে অফিসে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায় কুচাইপট্রী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় ৯ টি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে এবং এই ৯ টি প্রকল্পের সভাপতি হিসাবে কাজগুলো কোন রকম শেষ করে বিল তুলে নেন ওই ওয়ার্ডের মেম্বার মনির হোসেন। এবার তৃতীয় পর্যায়েও একই ওয়ার্ডে ৫টি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসের ২৭ তারিখে, ২৪-২৫ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাবিখা- খাদ্যশস্য এবং নগদ অর্থের অনিয়মের কারণে স্থানীয় সাংবাদিক ও সমাজকর্মী জাবেদ শেখ গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা বরাবর আইনি নোটিশ প্রেরণ করেন।
গণমাধ্যম ও সমাজকর্মী জাবেদ শেখ বলেন, আমার অনুসন্ধানে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের সভাপতির অফিস খরচের নামে ঘুষের বিষয়গুলো অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলেন, অনেক কাজের সভাপতি ইউপি সদস্যা গোপনে বললেও অনেকেই আবার ভিডিও ক্যামেরার সামনে ঘুষের বিষয়ে জানিয়েছে। এই বিষয় গুলো আমি যখন ইউএনও সহ গণমাধ্যমে প্রকাশ করি। তখন ইউএনও সাব্বির। অভিযোগকারীদের অফিসে ডেকে এনে ঘুষ দেন নাই এই মর্মে স্বাক্ষর রেখেছেন বলে জানতে পারি ডিআরআরও নাজনীন শামীমা এর মাধ্যমে। এমনকি যে সকল ইউপি সদস্যরা ভিডিও বক্তব্য দিয়েছে। তারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে বোঝান, আমি যাতে নিউজ না করি। ইউএনও ডেকে নিয়ে তাদের সাক্ষর নিয়েছে এই কথাও জানান তারা। এসকল বিষয়ে ভিডিও প্রমাণ রয়েছে। তারপরেও পিআইও সাহেব বলেছেন এগুলো মিথ্যে কথা। তারা কোন টাকা নেননি। শুনেছি এই কমিশনের ঘুষের টাকার ভাগ সবাই পায়। অনুসন্ধান করে ঘুষের বিচার প্রত্যাশায় কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে বললে সবাই এই বিষয়ে উদাসীন।এরপর এনিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের মহা-পরিচালককে জানালে তিনি বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ দিন। তদন্ত করে দেখবো। আমি ছাড়ছি না, আমি দুদকের কাছে অভিযোগ সহ গণমাধ্যমে ফলোআপ রাখবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইকবাল কবির বলেন, আমি এখন ব্যস্ত, পরে অফিসে এসে কথা বলুন।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নাজনীন শামিমা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয় তবে কোন কাজ না করে বিল নেওয়ার সুযোগ নাই, আমি গোসাইরহাটে পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম নিয়মানুযায়ী কাজ না করায় কয়েকটি প্রকল্পে আবার কাজ করতে বলে দিয়েছি।

 

কালের সমাজ/ ও.র./ সাএ

 

Side banner

পথে-প্রান্তরে বিভাগের আরো খবর

Link copied!