ঢাকা রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

যমুনার চরে টিকে আছে ঘোড়ার গাড়ির ঐতিহ্য

জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ | অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ১২:১২ পিএম যমুনার চরে টিকে আছে ঘোড়ার গাড়ির ঐতিহ্য

গ্রাম-বাংলার একসময়ের জনপ্রিয় যোগাযোগের বাহন ঘোড়ার গাড়ি এখন প্রায় বিলুপ্তপ্রায়। মেঠোপথের সেই ঐতিহ্যবাহী বাহন যান্ত্রিক যুগে হারিয়ে গেলেও সিরাজগঞ্জের যমুনা তীরবর্তী চরাঞ্চলে এখনো তার অস্তিত্ব টিকে আছে। বর্ষায় নৌকা, আর শুকনো মৌসুমে চরবাসীর মালামাল ও যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি।

প্রবহমান যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এতে নৌযান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরবাসীর জীবনযাত্রা এখন অনেকটাই ঘোড়ার গাড়িনির্ভর। কাজিপুর, চৌহালী, উল্লাপাড়া ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এখন শতাধিক ঘোড়ার গাড়ি প্রতিদিন ছুটে বেড়ায় ধু-ধু বালুর চরে।

চরাঞ্চলের কৃষকরা জানান, শুকনো মৌসুমে বাদাম, ভুট্টা, মসুর ডাল, বোরো ধান ও মিষ্টি আলু চাষ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু রাস্তাঘাট না থাকায় এসব ফসল বাজারে তুলতে একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি।

কাওয়াকোলা ইউনিয়নের কাটাঙ্গার চরের ঘোড়ার গাড়ি চালক কিরণ বলেন,
‘আমরা গরিব মানুষ, কাজ না করলে খাওয়া চলে না। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ঘোড়ার গাড়ি চালাই। দিনে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা আয় হয়, তার মধ্যে ঘোড়ার খাবারে ২০০-২৫০ টাকা খরচ যায়।’
তিনি জানান, আগে তাদের ইউনিয়নে ১০-১২টি গাড়ি ছিল, এখন বেড়ে হয়েছে ২৫-৩০টি। “চাহিদা বাড়ছে,” বলেন তিনি।

চৌহালীর তেগুরি চরের খাইরুল ইসলাম ও কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া চরের বকুল বলেন,
‘প্রায় এক যুগ ধরে ঘোড়ার গাড়ি চালাচ্ছি। শুকনো মৌসুমে চরবাসীর জন্য ঘোড়ার গাড়িই একমাত্র ভরসা। খরচ বেশি, আয় কম—তবুও এ পেশাই এখন আমাদের জীবিকার পথ।’

কাওয়াকোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম ভুঁইয়া বলেন,
‘যমুনায় চর জেগে ওঠায় নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই মানুষ বিকল্প হিসেবে ঘোড়ার গাড়ি ও ভাড়ায় মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। অনেকেই কৃষি ও মৎস্য শিকার ছেড়ে এখন ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।’

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন,
‘ঘোড়ার গাড়ি আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের অংশ। কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেলেও যমুনার চরাঞ্চলে এখনো সেই ঐতিহ্য টিকে আছে। বর্ষায় নৌকা, শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি—এই দুই বাহনের ওপরই নির্ভর করেন চরবাসী।’

ধু-ধু বালুর চর, দূরে মৃদু বাতাসে উড়ছে ধুলো—আর সেই পথ বেয়ে ছুটে চলেছে একের পর এক ঘোড়ার গাড়ি। সময় বদলেছে, কিন্তু চরবাসীর জীবনের গতি এখনো থেমে নেই—চলেছে সেই চাকার ঘূর্ণিতে।

 

কালের সমাজ/  জ.জ./সাএ

 

 

Side banner

গ্রাম-গঞ্জ বিভাগের আরো খবর

Link copied!