গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ধীরাইল গ্রামের কৃষানী লিপী বেগম। এ বছর বোরো মৌসুমে ৩ একর জমিতে ‘বিনাধান-২৫’-এর আবাদ করেন। ফলনও হয়েছে বাম্পার।  
‘বিনাধান-২৫’ বাসমতির মতো দেখতে চিকন ও লম্বা এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বিগত কয়েক বছর ধরে এ ধানের চাষ করে আসছেন তিনি।
লিপি বেগম বলেন, এ জাতের ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড় না লাগায় ফলন বেশি হয়েছে। সেই সাথে সার ও কিটনাশক একেবারেই না লাগায় আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে। ফলে আগামী বছরও তিনি এই জাতের ধানের আবাদ করবেন।  
লিপি বেগমের মতো একই কথা জানান ধীরাইল গ্রামের আরো বেশ কয়েকজন কৃষক।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র দাবি করেছে, ‘বিনাধান-২৫’ দেখতে বাসমতির মতো চিকন ও লম্বা, খেতেও সুস্বাদু। অন্যান্য ধানের তুলনায় রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় ফলনও বাড়ে। সেই সাথে সেচ ও সার কম লাগায় অর্থ সাশ্রয় হওয়ায় এ জাতের ধানের আবাদ বেড়েছে গোপালগঞ্জে। এ জাতের ধান চাষ করলে একই জমিতে চার ফসলে রূপান্তর করার পাশাপশি আমদানি নির্ভরতা কমবে।
আমদানি নির্ভরতা কমায় একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে কৃষক লাভবান হবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জের কৃষকরা হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের আবাদ করে থাকেন। তবে এ বছর গোপালগঞ্জের কৃষকরা বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বিনাধান-২৫ জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এতে ফলনও হয়েছে বাম্পার। মাঠের পর মাঠ সোনালী ধান বাতাসে দোল খাচ্ছে।
১৪০ দিনের স্বল্প জীবনকাল হওয়ায় প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এ জাতের ধান আগাম পাকায় কৃষকরা দ্রুত ঘরে তুলতে পারেন। তবে জমিতে পানি জমে থাকলে বা ঝড়-বৃষ্টির হলে গাছ সাময়িক হেলে পড়লেও গাছের গোড়া সবুজ থাকে এবং মাটির সাথে মিশে যায় না। ফলে এতে ফলনে কোনো প্রভাব পড়ে না। এ জাতের ধানে অন্যান্য ধানের তুলনায় রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় একদিকে যেমন ফলনও বাড়ে, অন্যদিকে সেচ ও সার কম লাগায় অর্থ সাশ্রয় হওয়ায় এ জাতের ধান আবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন গোপালগঞ্জের কৃষকরা।
ধীরাইল গ্রামের কৃষানী মিনি বেগম বলেন, বিনার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ‘বিনাধান-২৫’ এর আবাদ করেছি। ফলনও খুব ভালো পেয়েছি। এ ধান আগাম পাকায় ঝড়-বৃষ্টির আগে কেটে ঘরে তোলা যায়। এবার অন্তত ৭০ মণ ধান পাব।
অপর কৃষক আকবর আলী বলেন, এ জাতের ধান আগে হয় এবং আগাম পাকে। ফলে ঝড়-বৃষ্টিতে কোনো ক্ষতি হয় না। এ জাতের ধানের ভাত খেতে সুস্বাদু। এ জাতের ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড় না লাগায় কোনো ধরনের কিটনাশক ব্যবহার করতেই হয়নি। এতে আমাদের আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে।
এদিকে, বিনার গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে ‘বিনাধান-২৫’ এর প্রায়োগিক পরীক্ষণ মূল্যায়ন ও চাষাবাদ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। এ মাঠ দিবসে প্রধান অতিধি ছিলেন বিনার মহাপরিচালক ড. মো.আবুল কালাম আজাদ।  
গোপালগঞ্জ বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মো. হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে মাঠ দিবসে প্রকল্প পরিচালক ড. মো.মাহবুবুল আলম তরফদার, উপপ্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সনজয় কুমার কুন্ডু, বিনা উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৌরভ অধিকারী উপস্থিত ছিলেন।  
বিনা গোপালগঞ্জের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, দেশে চিকন চালের প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং প্রতিদিনিই চাহিদা বাড়ছে। যে কারণে আমাদের বিদেশ থেকে চিকন চাল আমদানি করতে হয়। ‘বিনাধান-২৫’ চিকন ও লম্বা, খেতেও সুস্বাদু। এ জাতের ধান আবাদ করলে বিদেশ থেকে চিকন চাল আমদানি করতে হবে না। এতে আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে অন্যদিকে কৃষক লাভবান হবে।
বিনা ময়মনসিংহ-এর মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিনাধান-২৫’ বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির একটি জাত। বাংলাদেশ যত চিকন চালের আবাদ করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে চিকন চাল হলো ‘বিনাধান-২৫’। এ জাতের ধানের জীবনকাল কম, মাত্র ১৪০দিন। উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় একর প্রতি ৭৬ মণ উৎপাদন হলেও সর্বোচ ৮১ মণ ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। ফলে কৃষকরা লাভবান হয়ে থাকেন। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ‘বিনাধান-২৫’ অনন্য ভূমিকা রাখবে বলেও দাবি করেন বিনার মহাপরিচালক।
কালের সমাজ//গো.প্র//এ.জে

                                                
            
         
                    
                    
                    
                    
                    
                    
                    
                    
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
      
          
আপনার মতামত লিখুন :