ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২

পাহাড়ে অবৈধ বালি উত্তোলন, অভিযানেও থামছে না সিন্ডিকেট

কালের সমাজ মো. ইসমাইলুল করিম বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০১:৩০ পিএম পাহাড়ে অবৈধ বালি উত্তোলন, অভিযানেও থামছে না সিন্ডিকেট

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলা অবৈধ বালি উত্তোলনের স্বর্গরাজ্য হিসেবে রূপ নিয়েছে। পাহাড়ি ঝিরি ও নদী-ছাড়ার প্রায় দুই শতাধিক পয়েন্ট থেকে অবাধে চলছে পরিবেশ, প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র ধংসকারী অবৈধ বালি উত্তোলন। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও দমানো যাচ্ছেনা বালি খেকোদের। এমনকি বালি সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় কেউ। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের আগ্রাসনের শিকার হয়ে পুরো উপজেলার নদী-খাল-ছড়াগুলো এখন যেনো বালুখেকোদের নিষ্ঠুরতার বলি। ফলে বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ধারণ ক্ষমতার বেশি ওজনের বালু ভর্তি ট্রাক ও ট্রাক্টর চলার কারণে গ্রামীণ সড়কগুলোতে অকালে ভাঙন ধরেছে। এতে নদী-খাল ও ছড়াগুলোর স্বাভাবিকতা বিনষ্ট হচ্ছে। তবে ধীর গতির অভিযানকে দায় করে সচেতন মহল বলেন, মন চাইলো তাই অভিযান’ এটাকে একপ্রকার বালি উত্তোলনের স্বীকৃতি হিসেবে নিচ্ছে বালি সন্ত্রাসরা। কোনরকম অভিযানের পরপরই বালি খেকোরা ফের নিঃসংকোচে চরম বেপরোয়া হয়ে পড়েন। 

 

রবিবার (২৪ আগষ্ট) সকালবেলায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সবচেয়ে মাত্রাতিরিক্ত বালি খেকোদের তাণ্ডব চলছে ফাঁসিয়াখালীর বগাইছড়ি, মালুম্যা, ভাল্লুকখাইয়া ঝিরি, লাইল্যামার পাড়া, কালাপাড়া, আব্দুল্লাহর ঝিরি, কাগজীখোলা, সাপেরগাড়া, হারগাজা, ফাঁসিয়াখালী ছড়াসহ বিশেষ করে বগাইছড়ি খালের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে বালু উত্তোলন হচ্ছে না। নিষিদ্ধ ঘোষিত আ.লীগ নেতা আলাউদ্দিন, আবুল হোসেন, মিরাস ও বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর, মাসকালু‍‍`সহ মহরম আলী, দোকানদার শুক্কুর, সোনামিয়া, জামাল গংদের যৌথ সমন্বয়ে ৩০-৪০ জনের একটি সঙ্ঘবদ্ধ ভয়ঙ্কর চক্র প্রকাশ্যে বেপরোয়া বালু উত্তোলনে জড়িত করছে বলে জানা গেছে। তারা দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কক্সবাজার চকরিয়া ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পাচার করছেন প্রতিনিয়ত।

 

স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় ফাঁসিয়াখালীর কয়েকটি পয়েন্টে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে দুএকজনকে আটক করার পর সাময়িক বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও ফের দুই-একদিন পরেই মহল বিশেষকে ম্যানেজ করে আবারো শুরু হয় পরিবেশ ধ্বংসের মহাযজ্ঞ। একই দৃশ্য দেখা যায় সরই ইউনিয়নে। ডলু খাল, সরই খাল সহ বিভিন্ন প্রবহমান ঝিরি খাল থেকে একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে রমরমা কাঁচা টাকার গন্ধ আর রাজনৈতিক প্রভাবে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে-গেছেন। 

 

স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, এই ইউনিয়নে প্রায় ৩০/৩৫টি স্থান থেকে বিএনপি নেতা সেলিম, ইউনুছ, অপূর্ব ও পশু ডা: সেলিমসহ রিয়াদ-জিসান গংদের সিন্ডিকেট অনেকটা দাপটের সাথেই ড্রেজার লাগিয়ে বালি উত্তোলন করছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এর যৌথ টিম বালি উত্তোলনের স্পট গুলোতে একযোগে অভিযান পরিচালনা করে কঠোর পদক্ষেপ নিলে বালি খেকো সিন্ডিকেট হতে রক্ষা পাবে প্রবাহমান খাল, প্রাকৃতিক জীববৈচিত্রা, চাষের কৃষি জমি আর গ্রামীণ সড়ক গুলো। একইভাবে আজিজনগরের হিমছড়ি, মিশন পাড়া ও তেলুনিয়া খাল সহ ফাইতং ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়া, পূর্বে নয়াপাড়া এবং বাজারের আশপাশের ছোটছোট ঝিরিছড়াগুলো বাদ যাচ্ছেনা বালি সন্ত্রাস আবুল হোসাইন, জাহাঙ্গীর, ফারুক ও মিজান গংদের ছোবল থেকে। ফলে কয়েকটি ব্রিজ ও কালভার্ট ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানায়।

 

এবিষয়ে বান্দরবান পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ওখানে সরেজমিন গেলে আমাদের কেউ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেনা। বালি উত্তলনে জড়িতদের পূর্ণ ঠিকানা পেলে তখন কঠোর পদক্ষেপ নিতে আমাদের সহজ হবে। তাছাড়া ফাঁসিয়াখালীর বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, বাকী আরও মামলা প্রক্রিয়া দিন আছে।

 

লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন বলেন, আজ সরই ইউনিয়নে ৩ টি বালুর পয়েন্ট থেকে আনুমানিক ৫ লাখ ঘনফুট বালি জব্দ করা হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে লামা উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চলমান আছে। বালু উত্তোলনে জড়িতদের কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হচ্ছেনা। এ ব্যাপারে প্রশাসন জিরো টলারেন্সে আছে বলে জানান তিনি।

 

কালের সমাজ/ই.ক./সাএ

 

 

Side banner

পথে-প্রান্তরে বিভাগের আরো খবর

Link copied!