গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সরবরাহে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আকস্মিক অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুপুরে দুদকের গাজীপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের একটি এনফোর্সমেন্ট দল এই অভিযান চালায়।
দুদকের কর্মকর্তারা প্রথমে সাধারণ রোগী সেজে হাসপাতালে প্রবেশ করেন এবং সেবার মান পর্যবেক্ষণ করেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পরে তারা তাদের অফিসিয়াল পরিচয় প্রকাশ করে অভিযান শুরু করেন। অভিযানে ওষুধ বিতরণ ও খাদ্য সরবরাহসহ একাধিক খাতে ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, হটলাইনে আসা একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোরে বিভিন্ন রোগের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রয়েছে। অথচ রোগীদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সেই ওষুধ সরবরাহ না করে তাদের বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।
অভিযানের সময় দুদক দল আরও দেখতে পায়, কিছু ক্ষেত্রে রোগীদের প্রেসক্রিপশনে না থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালের রেজিস্টারে ওষুধ বিতরণের তালিকা দেখানো হয়েছে। আবার অনেক রোগীকে কাগজে-কলমে যে পরিমাণ ওষুধ পাওয়ার কথা, বাস্তবে তার চেয়ে কম দেওয়া হয়েছে।
খাবারে ব্যাপক কাটছাঁট
রোগীদের খাদ্য সরবরাহেও ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। হাসপাতালের রান্নাঘর ও খাদ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া পরীক্ষা করে দুদক কর্মকর্তারা দেখেন, কাগজে-কলমে বরাদ্দ থাকা খাবারের পরিমাণের চেয়ে রোগীদের কম খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ডিম, মাছ, ডাল ও তেলসহ গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্যের বরাদ্দ থেকে নিয়মিতভাবে কাটছাঁট করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ৫০ জন রোগীর জন্য বরাদ্দকৃত ডিমের সংখ্যা যাচাই করে দেখা যায়, রেজিস্টারে থাকা সংখ্যার সঙ্গে বাস্তবে মজুত বা বিতরণের সংখ্যার বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে।
অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও সেবার মান
অভিযানে হাসপাতালটির আউটডোর ও জরুরি বিভাগের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে দুদক দল। অনেক চিকিৎসককে নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায় এবং রোগীদের সেবার মান ছিল খুবই নিচু। রোগীরা দ্রুত চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়েও তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
দুদকের এনফোর্সমেন্ট দলের প্রধান জানান, অভিযানে প্রাপ্ত সব তথ্য-প্রমাণ ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দ্রুতই দুর্নীতি দমন কমিশনের উচ্চপর্যায়ে জমা দেওয়া হবে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হাসপাতালের জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কালের সমাজ/এসআর


আপনার মতামত লিখুন :