ঢাকা রবিবার, ১১ মে, ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

খেয়াং নারী ধর্ষণ ও হত্যায় রাবিতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

কালের সমাজ | হ্লাথোয়াইছা চাক, রাবি প্রতিনিধি মে ৯, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম খেয়াং নারী ধর্ষণ ও হত্যায় রাবিতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের মংখয় (খিয়াং) পাড়ায় খেয়াং আদিবাসী গৃহবধূ চিংমা খেয়াংকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) আদিবাসী শিক্ষার্থীরা।


বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেল তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ‘রাবি ও রুয়েট আদিবাসী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষে জোহা চত্বরের পাশে এসে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করেন।


সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, পাহাড়ি নারীদের ওপর সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। এসব ঘটনায় প্রশাসন ও রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততা রয়েছে বলেও তারা অভিযোগ তোলেন।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ধর্ষণের সময় পাহাড় কিংবা সমতলের ভেদাভেদ করা চলে না। নারী নির্যাতনের এই সংস্কৃতি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ব্যর্থতার ফল। নারী কমিশন বাস্তবায়ন নিয়েও এখন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে সভ্য সমাজ গঠনের কথা বলা নৈতিকভাবে ভুল।”


তিনি আরও বলেন, “এটি কেবল পাহাড়ের ঘটনা নয়, এটি বাংলাদেশের প্রতিটি নারীর নিরাপত্তার প্রশ্ন। সাম্প্রতিক সময়ে নারী কমিশনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে নারী নিপীড়নকে জায়েজ করার প্রবণতা বাড়ছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।”


সমাবেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রাচুর্য্য চাকমা বলেন, “পাহাড়ে প্রতিটি অপরাধে একটি অদৃশ্য শক্তির প্রভাব রয়েছে। পাহাড়ি নারী এখন স্বাধীনভাবে জুম চাষে যেতে পারে না। তাঁকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করা হচ্ছে। সেনাশাসনের নামে পাহাড়ে যেভাবে সেনা ক্যাম্প বসানো হচ্ছে, তা সাধারণ জনগণকে হয়রানির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”


তিনি আরও বলেন, “সম্প্রতি সেনাবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পাহাড়ি নারীর আপত্তিকর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, কিছু সেনা সদস্য পাহাড়ে ধর্ষকের ভূমিকায় পরিণত হয়েছেন। প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই ধর্ষকেরা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে।”


বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দেন, 
“ধর্ষকের ঠিকানা, সিএইচটিতে হবেনা”,
“পাহাড় থেকে সমতলে, লড়াই হবে সমানতালে”,
“ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকদের ফাঁসি চাই”,
“আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর, করতে হবে”,
“পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কর, করতে হবে”,
“আমার বোন ধর্ষিত কেন, রাষ্ট্র তোমার জবাব চাই” ইত্যাদি।


আদিবাসী শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন এবং পাহাড়ে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।


কালের সামজ//এসং//র.ন

Side banner