ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

শ্রীপুরে শিক্ষার্থীকে পিস্তল ঠেকিয়ে মারধর, অভিযুক্ত গ্রেফতার

কালের সমাজ কায়সার আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জুলাই ৯, ২০২৫, ০২:০০ পিএম শ্রীপুরে শিক্ষার্থীকে পিস্তল ঠেকিয়ে মারধর, অভিযুক্ত গ্রেফতার

গাজীপুরের শ্রীপুরে স্কুলের সামনে থেকে পিস্তল ঠেকিয়ে শিক্ষার্থী ফেরদৌসকে (১৩) ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে দেড় ঘণ্টা পর ওই শিক্ষার্থীকে ফেরত দিয়েছে। এ ঘটনায় স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ এলাকাবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত কাওসার আহমেদকে (২৮) আটক করেছে। বুধবার (৯ জুলাই) দুপরে কাউসারকে আদালতে পাঠানো হয়েছে জানিয়েছে পুলিশ।

 

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া গ্রামের হাজী প্রী-ক্যাডেট স্কুলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। স্কুল ছাত্রকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি এদিন সন্ধ্যার পর ২২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনায় আলোচনার জন্ম দেয়।

 

ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্র ফেরদৌস উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে। অভিযুক্ত কাওসার আহমেদ একই ইউনিয়নের ধনুয়া গ্রামের ইমান আলীর ছেলে। এসময় কাওসারের চাচা এমদাদুল হক এবং তার সহযোগী নূরুল হকসহ কয়েকজন ওই ছাত্রকে ধরে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করতে দেখা যায়।

 

স্থানীয়রা জানান, ভুক্তভোগী ফেরদৌস হাজী প্রী-ক্যাডেট স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং অভিযুক্ত কাওসার আহমেদের ভাগিনা ওবায়দুল একই স্কুলের নবম শ্রেনীর শিক্ষার্র্থী। ফেরদৌস এবং ওবায়দুল ওই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক জড়িয়ে পড়ে। ওবায়দুল তার মামাতো ভাই সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া আরাফাতকে তাদের বিষয়টি জানায়। পরে তারা দুইজন ফেরদৌসকে জিজ্ঞাসা করার জন্য বিকেলে স্কুলের সামনে গিয়ে অপক্ষো করে। স্কুল ছুটির পর এ বিষয় নিয়ে ফেরদৌসের সাথে ওবায়দুল এবং আরাফাতের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে আরাফাত তার বাবা এমদাদুল হককে খবর দিলে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। এ খবর পেয়ে তার ভাতিজা অভিযুক্ত কাওসার আহমেদও ঘটনাস্থলে আসে এবং ফেরদৌসকে মারধর করতে করে ধরে নিয়ে যায়। এসময় স্কুলের শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বাধা দিতে চাইলে কাওসার পিস্তল বের করে তাদেরকে গুলি করার হুমকি দেয়।

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২২ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুল ড্রেস পড়া এক শিক্ষার্থীকে কয়েকজন যুবক মারতে মারতে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। স্কুল শিক্ষক রুবেলসহ শিক্ষার্থীরা তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যান। একপর্যায়ে টি-শার্ট পড়া কাওসার আহমেদ পিস্তল দিয়ে শিক্ষক রুবেল হোসেনের দিকে তাক করে ভয় দেখান।

 

শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুল ছুটি হওয়ার পর আমরা বাইরে যাই। কয়েকজন লোক হঠাৎ করে এসে ফেরদৌসকে ধরে মারতে শুরু করে। আমরা চিৎকার দিলে স্যারেরা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করতে চেষ্টা করলে একজন রুবেল স্যারের দিকে পিস্তল তাক করে। পরে ভয়ে সবাই দৌড়ে চলে যাই।

 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফেরদৌসের মা জানান, তাদের (অভিযুক্তদের) কারো নাম্বার থেকে আমাকে ফোন দিয়ে ছেলেকে তাদের কাছ থেকে নিয়ে আসার জন্য বলে। পরে সেখানে গিয়ে দেখি তারা আমার ছেলেকে মারধর করছে। আমি যাওয়ার পর তারা আমাকেসহ মারধর করার চেষ্টা করে এবং তারা এও বলে আওয়ামীলীগের নেতার সাথে বাড়াবাড়ী করা যাবে না। ছেলে পেয়েছো নিয়ে চলে যাও গা, মারধর করে আমার ছেলেকে আমার কাছে দিয়ে দিয়েছে। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যায়। তবে আমার ছেলেকে ধরে তারা কেন মারতে মারতে নিয়ে গেলো আমি নিজেও জানিনা, তারাও বলতে পারে না।

 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফেরদৌস বলেন, আমি স্কুল থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে চারজন ছেলে আমাকে স্কুলের পাশে টেনে নিয়ে মারধর শুরু করে। তারপর চারজনের অভিভাবক এসে স্কুল থেকে এক কিলোমিটার দূরে তাদের বাসার সামনে নিয়ে যায়। নিয়ে যাওয়ার সময় তারা আমাকে রাস্তায় মারতে মারতে নিয়ে যায় এবং ওখানে নিয়েও মারধর করে। প্রতিবাদ করলে কাউসার বলে একবারে শুট করে দিব, কথা বলিস না। কি কারনে তারা আমাকে ধরে নিয়ে মারধর করছে এবং শুট করার হুমকি দিয়েছে আমি বলতে পারি না।

 

হাজ¦ী প্রী-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নূরুন্নাহার বলেন, স্কুল ছুটি হওয়ার পর বাচ্চারা (শিক্ষার্থীরা) যাওয়ার পথে বাহিরে ঝগড়া লেগেছে। বাচ্চারা ঝগড়া লাগার পর আমি যখন বাসার দিকে চলে যাচ্ছি তখন দেখি ওখানে তাদের অভিভাবক আসছে অনেক হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমি আসলে সবাইকে চিনি না। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে থেকে একজন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমার স্কুলের শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় স্কুলের শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরাও ভয়ে আতঙ্কিত। গুলি ফুটিয়েছে কিনা একথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, উপরের দিকে পিস্তল তাক করেছে। আমার স্কুলের শিক্ষকের দিকেও পিস্তল তাক করেছে এবং বলেছে যে সামনে আসবেন তাকে আমরা গুলি করবো। পিস্তলধারীর এ হুমকিতে বাচ্চাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় কেউ সাহস করে এগিয়ে যেতে পারি নাই। যে শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে গেছে সে আমাদের স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ফেরদৌস।

 

ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনার শুনার সাথে সাথে আমরা স্কুলের সকল শিক্ষকই ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আমাদের স্কুলের ছাত্র ফেরদৌসকে মারধর করা হচ্ছে। তখন আমরা ফেরানোর চেষ্টা করি। যে ছেলের সাথে ঝগড়া হয়েছে তার চাচা এবং বাবা এসে অনেক মারধর করে। তখন আমরা শিক্ষার্থীকে রাখার চেষ্টা করলে কাওসার অস্ত্র বের করে আমাদের ভয় দেখায়, উপরের দিকে তাক করে ফায়ার করার চেষ্টা করে। এ সময় আমাদের সাথে থাকা রুবেল স্যারের বুকে পিস্তল ঠেকায়। তখন বলে তাকে রক্ষা করতে যে সামনে আসবেন এবং ফেরাইতে আসবেন তাকে গুলি করবো। পরে আমরা ভয়ে সরে গেলে ওই শিক্ষার্থীকে মারতে মারতে নিয়ে যায়।

 

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, মোবাইল ট্র্যকিংয়ের মাধ্যমে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ১০ টায় কাওসার আহমেদকে শ্রীপুর পৌর এলাকার গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ী থেকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে অনলাইনের মাধ্যমে ওই পিস্তল কিনেছিল। ভয়ভীতি দেখানোর জন্য সে মুভমেন্ট করেছে।

 

কি নিয়ে ওই ছাত্রের (ভুক্তভোগী) সাথে বিরোধ এ বিষয়ে তিনি বলেন, তার চাচাতো ভাই আরাফাত স্কুলের কাছে যাওয়ার পর ভিকটিমের সাথে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে এলাকার প্রভাব দেখিয়ে সে (আরাফাত) তার বাবা এমদাদকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে যায়। এমদাদের ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা কাউসারকে খবর দিলে সে খেলনা পিস্তল নিয়ে আসে এবং ভুক্তভোগীকে টেনে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ উপস্থিত হলে তারা শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয়। পুলিশ তার বাড়ী তল্লাশী করে দুইটি ওয়াকিটকি, একটি চার্জার এবং যে পিস্তল দেখিয়েছিল সেটা পেয়েছি। পরীক্ষা করে দেখা যায় এটা নকল পিস্তল।

 

কালের সমাজ/ কা. আ./ সাএ

 

 

Side banner
Link copied!