ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের ৮ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
গতকাল রোববার ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে দশম কমিশন সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমাদের দশম সভা এই বছরের অনুষ্ঠিত হয়েছে, আমাদের সভার অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল আইন এবং রীতির আলোকে তফসিল পূর্ব এবং তফসিল উত্তর কার্যক্রম নিয়ে। শীঘ্রই আমাদের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের তফসিল ঘোষণা করা হবে। যেমনটি আমাদের মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয় বলেছেন এই সপ্তাহের মধ্যেই কোনও একসময় আমরা তফসিল ঘোষণা করবো।
সপ্তাহ আপনারা কী হিসাবে হিসাব করছেন, রবি থেকে বৃহস্পতি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে দ্বিতীয় সপ্তাহে, এই দ্বিতীয় সপ্তাহেই হবে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ; ৮ তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে।
এ সময় ছুটির দিনও ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার।
ইসি মো. সানাউল্লাহ বলেন, তফসিল পূর্ব কার্যক্রমের মধ্যে আমাদের কতগুলো রীতিগত রীতি অনুযায়ী কিছু কাজ আছে। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির
সঙ্গে দেখা করবো পুরা কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছে আগামীকাল পত্র পাঠানো হবে। আমাদের তফসিল পূর্ব যে কার্যক্রমগুলো ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সেগুলোর স্টেপ নেয়া হয়েছে। যেমন সংলাপ আইন এবং বিধির সংস্কার এবং আমরা আশা করছি যে গত সপ্তাহে যেগুলোর সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে আজ বা কালকের মধ্যে সেগুলো আমরা হাতে পেয়ে যাবো।
ভোটগ্রহণের সময় বাড়লো এক ঘণ্টা, শুরু সকাল সাড়ে ৭টায় : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সাধারণত সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। কিন্তু এবার গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে হওয়ার কারণে এক ঘণ্টা বাড়বে ভোটগ্রহণের সময়। এতে সকাল সাড়ে ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশনের দশম কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এ কথা জানান।
তিনি বলেন, আমরা ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সকালে আধা ঘণ্টা এবং বিকেলে আধা ঘণ্টা বাড়বে। অর্থাৎ এখন ভোট শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
ইসি সানাউল্লাহ আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে একটি পরিপত্র এই সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে দেওয়া হবে। এটার আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। যে কেন্দ্রে যে ধরনের ফোর্স ডেপ্লয় (মোতায়েন) করা দরকার সেটা ডেপ্লয় হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে একটা সেন্ট্রাল মনিটরিং সেল স্থাপিত হবে, যেখানে সব বাহিনী এবং প্রতিষ্ঠানের সংস্থার প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এই সেল থেকে মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন হ্যান্ডেল করা হবে। যদিও মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য নিজ নিজ বাহিনী, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সক্ষমতা আছে, বিষয়টি তারা দেখবে।
কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছাবে আগের রাতে : প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট পেপার পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং একই দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঐতিহাসিক গণভোট সামনে রেখে কমিশন প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এই দুই ভোট আয়োজন সফল করতে সংস্থাটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচনি সামগ্রীর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্যালট পেপারসহ সব নির্বাচনি সামগ্রী আগের মতো আগের রাতেই সব কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। আমাদের যেহেতু দুটো নির্বাচন একসঙ্গে করতে হচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট একসঙ্গে হবে। দুটি বিষয়ে ম্যানেজমেন্টে করতে হবে। আপনারা জানেন আমরা একটা মক ভোটিং করেছিলাম। সেটার অভিজ্ঞতা প্লাস মাঠপর্যায়ে যারা এর আগে ভোট আয়োজন করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেসব কক্ষে ভোটার বাড়বে সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিক্রেট বুথ স্থাপন করা হবে।
প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগে বেসরকারি ব্যাংক বিবেচনায় : আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে আমরা বেসরকারি যে ব্যাংকগুলো আছে সেগুলো আপাতত বিবেচনায় নিচ্ছি না। এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা রিজার্ভে থাকবেন। একান্ত প্রয়োজন না হলে তাদের নেওয়া হবে না।

প্রধান উপদেষ্টাকে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে প্রস্তুতির কথা জানাল সিইসি : ফেব্রুয়ারিতে একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত’ থাকার কথা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন এ অগ্রগতি তুলে ধরেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সম্পর্কে জানায়।
বৈঠকে সিইসি বলেন, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি সঠিক ও সুন্দরভাবে এগোচ্ছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও একই দিনে গণভোট আয়োজনের জন্য তারা ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত’ রয়েছেন।
প্রস্তুতির বিষয়ে ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ধন্যবাদ জানান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানান সিইসি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নাগরিকরা নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন, যা দেশে নির্বাচনি আমেজ সৃষ্টি করেছে।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
জাতির জন্য প্রতীক্ষিত এ নির্বাচনে আমাদেরকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতির জন্য প্রতীক্ষিত এ নির্বাচনে আপনারা (ইসি) চালকের আসনে আছেন। আমাদেরকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ৪ কমিশনার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতিকে আমরা ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছি।

আগামী সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি সঠিক ও সুন্দরভাবে এগোচ্ছে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও একই দিনে গণভোট আয়োজনের জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
প্রস্তুতিকালে ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা।
নির্বাচনের প্রস্তুতিকালে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় সিইসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নাগরিকরা নির্বাচনী কর্মকা-ে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন, যা দেশে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি করেছে।
কালের সমাজ/এসআর


আপনার মতামত লিখুন :