ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন ( ৭৭৫/৭৭৬ ) - মাসে লোকসান ৫০ থেকে ৬০ লাখ

কালের সমাজ | জলিলুর রহমান জনি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন ( ৭৭৫/৭৭৬ ) - মাসে লোকসান ৫০ থেকে ৬০ লাখ

সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ট্রেন সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস - কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করা ট্রেনগুলোর একটি ‌। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২৭ জুন চালু হয় ট্রেনটি। এখন ট্রেনটি চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে খরচই তোলা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন লোকসান গুনছে রেল বিভাগ।


বুধবার (২৩ জুলাই) সিরাজগঞ্জ বাজার রেলস্টেশনে কথা হয় বুকিং সহকারী সানাউল্লাহর সঙ্গে। তিনি জানান, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের সাতটি বগিতে মোট ১০৪টি আসন রয়েছে। সপ্তাহে শুক্রবার বাদে ভোর ৬টায় সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আবার বিকেল ৫টায় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। সোমবার(২১ জুলাই) অনলাইন ও কাউন্টার মিলে মোট আয় হয়েছিল ১১ হাজার ৯২০ টাকা। যাত্রী সংখ্যা ছিল মাত্র ৪১ জন।


রেলওয়ে সূত্র বলছে, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনসহ দেশের অন্তত পাঁচটি আন্তনগর ট্রেন পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছে না। মূলত রাজনীতিবিদদের চাপে এসব ট্রেন চালু করা হয়েছিল। জ্বালানি খরচ, লোকবল ও অন্যান্য খরচ বিবেচনায় শতভাগ যাত্রী পরিবহন করার পরও আন্তনগর ট্রেনে লোকসান হয়। আছে ইঞ্জিন-কোচের সংকট। এ পরিস্থিতিতে লোকসান হওয়া ট্রেনগুলো বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।


২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ৬৬টি নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু করে। এ সময়ের মধ্যে মেইল, এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেন চালু করে ৯২টি। অবশ্য জনপ্রিয় প্রায় ৯৮টি মেইল ও কমিউটার ট্রেনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ একদিকে বন্ধ করে অন্য পথে ট্রেন চালু করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রেলের রুট রেশনালাইজেশনের উদ্যোগ নেয়। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে কম আয় করা ট্রেন বন্ধ এবং বেশি যাত্রী চাহিদা রয়েছে এমন পথে ট্রেন বাড়ানো। এছাড়া আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি
হওয়া ট্রেনও বন্ধ করে দেওয়া।


রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রূপম আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিশেষজ্ঞ ও ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছেন। গত প্রায় ছয় মাসে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। তবে এখনো সুপারিশ তৈরি করতে পারেনি কমিটি।


সূত্রটি আরও জানায়, এসব ট্রেন চালু করা হয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা বলে। ফলে দিনদিন লোকসানের বোঝা ভারী হচ্ছে। রেলওয়ে এখন প্রতিবছর গড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনছে। যা গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ৬৯০ কোটি টাকা।


প্রতি বৃহস্পতিবার ট্রেনটি ওয়াশ করার জন্য ঈশ্বরদীতে নেওয়া হয়। আবার যাত্রী আনতে সেটি সিরাজগঞ্জ যায়। এভাবে জামতৈল, সিরাজগঞ্জ ও ঈশ্বরদীর মধ্যে ঘোরাঘুরিতে সময় নষ্ট হয়। অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হয়। এতে ব্যয় বেড়ে যায়


সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে গড়ে ৮৮ শতাংশ যাত্রী হয়। প্রতিমাসে গড়ে ব্যয় হয় ৮০-৯০ লাখ টাকা। যার বিপরীতে আয় হয় ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিমাসে লোকসানের পরিমাণ ৫০-৬০ লাখ টাকা।


ট্রেনটিতে লোকসান হওয়ার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেল বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‌প্রতি বৃহস্পতিবার ট্রেনটি ওয়াশ করার জন্য ঈশ্বরদীতে নেওয়া হয়। আবার যাত্রী আনতে সেটি সিরাজগঞ্জ যায়। এভাবে জামতৈল, সিরাজগঞ্জ ও ঈশ্বরদীর মধ্যে ঘোরাঘুরিতে সময় নষ্ট হয়। অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হয়। এতে ব্যয় বেড়ে যায়।


পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী) গৌতম কুমার কুন্ডু বলেন, “ঈশ্বরদী থেকে ঢাকায় একটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করতো। সেটি বাদ দিয়ে ‘সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস’ নামে নতুন ট্রেন চালু করা হয়। এটি কয়েক মাস বন্ধও ছিল। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় চালু হয়। ট্রেনটিতে খরচ না উঠলেও বন্ধ করবে কি-না, সেটা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

 

কালের সমাজ//র.ন

Side banner

পথে-প্রান্তরে বিভাগের আরো খবর

Link copied!