বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় সরকারি সহযোগিতায় রেশম চাষ হচ্ছে। বছরে ৪ বার রেশম চাষ করা হয়। ইতোমধ্যে চাষিদের পলু চাষের জন্য ৭০টি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে আর চলমান আছে ৫৭টি ঘর।
সিরাজগঞ্জের যমুনার তীরবর্তী ওয়াপদা বাঁধের পাশদিয়ে পতিত জায়গায় চাষিরা তুঁত গাছ রোপণ করে রেশম চাষ করছেন। এছাড়াও উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে রেশম চাষ করে চলেছেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১২৫ জন। এরমধ্যে ৬২জন পুরুষ বাকি সবাই নারী। এরা পলু পোকা পালনের মাধ্যমে রেশম চাষ করছেন।
জানা যায়, প্রায় এক যুগ আগে যমুনার চরে বেলে, দো-আঁশ মাটিতে তুঁত গাছ রোপণ করে ভালো ফলন পাওয়ায় ভাঙনকবলিত এসব চরের মানুষেরা অনেকটা স্বাবলম্বী হয়েছে। আগে চাষিদের পলু পোকার ১০০ ডিম সংগ্রহ করতে ২০৫ টাকা খরচ হলেও বর্তমানে রেশম বোর্ড ডিম বিনামূল্যে বিতরণ করছে। বোর্ডের পক্ষ থেকে তুঁত গাছও সরবরাহ করা হচ্ছে।
উৎপাদিত এসব রেশম গুটি বোর্ডের মাধ্যমে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালোভাবে চাষ হলে এক মৌসুমে ৩০/৬০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান সিরাজগঞ্জ সদর থানার দৌলুতপুর গ্রামের পলু চাষি জাহাঙ্গীর। রায়গঞ্জের জুবায়ের হোসেন, উল্লাপাড়া ঘাটিনা গ্রামের হাসান আলী জানায়, রেশম চাষ করে আর্থিকভাবে সফলতা অর্জন করেছেন তারা।
সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের শৈলাবাড়ী গ্রামের রেশম চাষি মরিয়ম বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তুঁত গাছ, ঘর দেওয়া সবকিছুতেই বাংলাদেশ রেশম বোর্ড সিরাজগঞ্জ সহযোগিতা করছে। রেশম চাষ অনেক লাভজনক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রেশম চাষ করেন। রেশম চাষ করে উপার্জিত টাকা দিয়েই তিনি সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালান।
খোকসাবাড়ি গ্রামের রেশম চাষি ভূমিহীন হাসনা বানু বলেন, পরিবারের সবাই মিলে রেশম চাষ করেন তারা। এটি চাষে তেমন কোনো ঝামেলা নেই বললেই চলে। থাকার ঘরের এক কোণায় মাচাতে পলু পোকা লালন-পালন করেন তিনি। বছরে চারবার পলু পোকার ডিম উঠান তিনি। একবার ডিম উঠালে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই রেশমের গুটি হয়।
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের টেকনিক্যাল সুপারভাইজার মো. জাহিদুল হাসান বলেন, বর্তমানে রেশম চাষের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের কয়েকটি উপজেলার বেশকিছু মানুষ আর্থিকভাবে সফলতা অর্জন করেছে। এই এলাকায় বেলে-দোআঁশ মাটিতে তুঁত গাছ ভালো জন্মে। তাই এখানে রেশম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। রেশম বোর্ডের পক্ষ থেকে চাষিদের মাঝে নিয়মিত তুঁত চারা বিতরণ করা হয়। সেই গাছ থেকেই পাতা সংগ্রহ করে পলু পালন করা হয়। এছাড়া পলু ঘর নির্মাণে সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন উপজেলার রেশম চাষিদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :