ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্সা, ভাসমান হকার এবং দোকানিদের দখলে চট্টগ্রামের সড়ক ও ফুটপাত

কালের সমাজ | আজগর সালেহী, চট্টগ্রাম ব্যুরো আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০৬:০১ পিএম অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্সা, ভাসমান হকার এবং দোকানিদের দখলে চট্টগ্রামের সড়ক ও ফুটপাত

চট্টগ্রাম নগরীর সড়ক, অলিগলি ও ফুটপাত এখন যেন এক অঘোষিত দখলদারির রাজ্যে পরিণত হয়েছে। একদিকে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশার বেপরোয়া চলাচল, অন্যদিকে ফুটপাতজুড়ে দোকানিদের মালামাল স্তূপ, ভাসমান হকারদের ভ্যান ও স্টল—সব মিলিয়ে যানজট ও পথচারীর দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন রাস্তা ও ফুটপাত মুক্ত রাখতে দিনরাত অভিযান চালাচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবে চিত্র ভিন্ন।

সিটি করপোরেশন ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ফুটপাত থেকে মালামাল সরানো হলেও, মাত্র এক-দুই ঘণ্টার মধ্যেই দোকানিরা আবার আগের জায়গায় মাল রেখে দেয়। রাস্তার পাশে পণ্য সাজিয়ে রাখা, ফুটপাতজুড়ে শো-রুম বানানোর প্রবণতা শহরের প্রায় সব বাণিজ্যিক এলাকায় দেখা যায়। সদরঘাট, আন্দরকিল্লা, নিউমার্কেট, চকবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, বহদ্দারহাট মোড়, মুরাদপুর মোড়, ২নং গেইট, জিইসি, দেওয়ানহাট, বাদামতল ও কালামিয়া বাজার থেকে শুরু করে গোটা চট্টগ্রাম সিটির গলিপথের দোকানও একইভাবে ফুটপাত দখল করে রেখেছে।

পাশাপাশি, ভাসমান হকাররা দিনের পর দিন রাস্তার মাঝখানে ভ্যান বা স্টল বসিয়ে রাখছেন। কাপড়চোপড়, জুতা সেন্ডেল, ফল, সবজি, সব ধরনের পণ্যই এখন মূল সড়কের অংশ দখল করে বিক্রি হচ্ছে। এতে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, বিশেষ করে অফিস টাইম ও বাজার ঘন্টায় যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

অন্যদিকে, নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় নতুন এক বিপর্যয়ের নাম ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা। সংখ্যা নিয়ে স্পষ্ট তথ্য না থাকলেও অনুমান করা হচ্ছে, এটি পঞ্চাশ হাজার ছাড়িয়েছে। কোনো নীতিমালা, লাইসেন্স বা ট্যাক্স ছাড়াই অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক পর্যন্ত এই ঝুঁকিপূর্ণ বাহন ছুটে চলেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সিএমপি ব্যাটারি রিকশা নিষিদ্ধ করলেও, ধরা পড়া সত্ত্বেও অভিযানের পর পুনরায় চলাচল শুরু হয়।

সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ গত সপ্তাহে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্পষ্ট করেছেন, “অলিগলি বলে কিছু নেই, চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও আর কোনো ব্যাটারি রিকশা চলবে না।” কিন্তু নাগরিকদের প্রশ্ন, নিষিদ্ধ হলেও গলিতে চলাচল কীভাবে বৈধ হলো?

খুলশীর বাসিন্দা মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, “ফুটপাত তো পথচারীর জন্য, রাস্তাও গাড়ির জন্য। কিন্তু দোকানদার, হকার আর ব্যাটারি রিকশার দাপটে কোথাও জায়গা নেই। অভিযান হয়, মালামাল সরানো হয়, আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই একই চিত্র। পুলিশ, করপোরেশন—কেউই এই চক্র ভাঙতে পারছে না।”

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমরা প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছি, ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতা ও পুনঃদখলের প্রবণতা বড় সমস্যা। ব্যাটারি রিকশার বিষয়টি পুলিশের এখতিয়ার, তাদের গণবিজ্ঞপ্তি ও পদক্ষেপ আমরা সমর্থন করি।”

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত রাখতে হলে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। দোকানিদের জন্য নির্ধারিত স্টোরেজ, হকারদের জন্য আলাদা মার্কেট বা নির্দিষ্ট এলাকা, এবং ব্যাটারি রিকশার জন্য রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট চালু করতে হবে। আইন মানতে বাধ্য করতে না পারলে যে কোনো অভিযানই ব্যর্থ হবে।

কালের সমাজ//র.ন

Side banner
Link copied!