স্বাধীনতা-উত্তর দেশ গড়ার ধারাবাহিকতা ও বাস্তবমুখী উন্নয়নের এক অভূতপূর্ব সূচনা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির মূল্যায়ন, সামগ্রিক রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, রিজার্ভের গতি সঞ্চালন — এক নতুন দিনের আলো ছড়িয়ে দিয়েছিল। কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ব্যাংকিং খাতে এক যুগান্তকারী অনুপ্রেরণা জাগিয়েছিল। একই সাথে খাল খনন, আবাদি জমির পূর্ণ ব্যবহার — বাংলাদেশকে অর্থনীতির আগামী স্বপ্নের অধ্যায় দেখতেই বাধ্য করেছিল। কাল হয়েছিল নিয়তি, যার জুলুমের পরিণতির সাক্ষী ১৯৮১ সালের ৩০শে মে — কালজয়ী এক দেশপ্রেমিকের প্রয়াণ।
সেই ভিত্তির ছোঁয়া আজও কৃষি ও কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক শক্তি হিসেবেই প্রচলিত।
রপ্তানিমুখী কৃষি ও সময়কে পণ্য করে রাজধানী ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কৃষির উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কতিপয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষির উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ময়মনসিংহ, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষির সম্প্রসারণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে অনেকেই নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছেন।
অনুরূপ এক জরিপে দেখা গেছে, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জে পাথরচর, জিঙ্গিরআ ও বাহাদুরপুর সেতুর অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে রপ্তানিমুখী কৃষির জন্মদাতা এক দেশপ্রেমিক — যার নিরলস প্রচেষ্টা এই দুই উপজেলাকে উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছিল। সেই উদার প্রাণ দেশপ্রেমিক এম. রশিদুজামান মিল্লাত পরবর্তীতে এক স্বার্থক সংসদ সদস্য ছিলেন এবং তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটি বিশেষ অংশ হিসেবে প্রয়াত সেই দেশপ্রেমিকের আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অগ্রগামী ছিলেন। মূলত দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বল্প সুদে কৃষি ঋণের প্রসার ও দেশকে মন্দ ঋণের কারাগার হতে মুক্তি প্রদানই একমাত্র হাতিয়াররূপে নির্ধারণ করেছিলেন জনাব মিল্লাত।
বাংলাদেশের প্রথম গ্রীন হাউজ প্রতিষ্ঠা ও রপ্তানিমুখী আবাদের পিতা জনাব মিল্লাত আজও ব্যক্তি উদ্যোগের এক জীবন্ত উদাহরণ।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত যখন এক দুর্বিষহ সময় অতিক্রম করছে, মন্দ ঋণের মাত্রা যখন প্রায় ৫ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই করছে — ঠিক তখন হৃদয়ের এক প্রান্তে মনে পড়ে সেই প্রয়াত শহীদ দেশপ্রেমিকের দেশ গড়ার উচ্ছ্বাস, যার প্রতিফলন বহু কণ্ঠে আজও বেজে ওঠে —“প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ, আমার মরণ বাংলাদেশ।”
মাটি ও মানুষের ও নতুন প্রজন্মের এক অভিব্যক্তি এম. রশিদুজামান মিল্লাত — জামালপুর তথা বাংলাদেশের ক্ষেত্রজয় অর্জনের এক প্রকাশ্য সৈনিক, যার নির্ভীক দেশপ্রেম এক রূপকথার জন্ম দেয়।
প্রাচীন সভ্যতার এক বচন — “আগাবে দেশ, জীবিত হবে জীবন, বাঁচবে জাতি হবে উন্নয়ন।”
বাংলাদেশে এখন এই স্বপ্ন দেখা যায় না। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক বড় মানুষ আছেন, যারা আমাদের দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। নিজের ইচ্ছে আর শহরভিত্তিক কাঠামো উন্নয়ন বাদ দিয়ে প্রান্তিক ঋণ প্রদান দেশের উন্নয়নকে গতিশীল করবে। ঋণ বিচার যথাযথ হবে আর মন্দ ঋণের অবসান হবে, তবেই ব্যাংকিং খাত ও শিল্পের বিকাশ ঘটবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সুফল পাওয়া যাবে এবং দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
আমরা বিশ্বাস করি, এম. রশিদুজামান মিল্লাতের অনুরূপ নেতৃত্ব দেশের জনগণের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, কৃষির উন্নয়নে অবদান রাখবে, কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবে ও রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে। যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দ ঋণের বোঝা কমবে এবং বিশেষ সুবিধা-প্রাপ্ত গোষ্ঠী বিলুপ্ত হবে।
বাংলাদেশের মানুষ আজ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের আগামী নেতৃত্ব ও নেতৃত্বের আদর্শ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আমাদের এই প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে আমি আশা করছি।
সবার উপরে দেশ।
তারিক আফজাল
ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ
কালের সমাজ/এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :