ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

বাবুর্চিকে বলাৎকার ও নির্যাতনের অভিযোগে উপ-পরিচালকসহ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

কালের সমাজ | কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি আগস্ট ৩, ২০২৫, ০৮:২০ পিএম বাবুর্চিকে বলাৎকার ও নির্যাতনের অভিযোগে উপ-পরিচালকসহ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

কিশোরগঞ্জের হর্টিকালচার সেন্টারে এক বাবুর্চিকে বলাৎকার ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমান (৪৫) ও উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র বিশ্বাসের (৪২) বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত ২১ জুলাই কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর আমলগ্রহণকারী আদালতে ওই বাবুর্চি নিজেই বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। বিচারক মাহমুদুল ইসলাম অভিযোগটি আমলে নিয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

ভুক্তভোগী যুবক ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বাসিন্দা এবং ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল থেকে কিশোরগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে বাবুর্চির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে ডরমিটরির দ্বিতীয় তলায় খাবার পৌঁছে দিলে উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমান তাঁকে শরীর ম্যাসেজ দিতে বলেন। ম্যাসেজ করার এক পর্যায়ে জোরপূর্বক বলাৎকার করেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। সেইসঙ্গে ডান হাতে কামড় দিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। প্রতিবাদ করলে চাকরি হারানো ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

এছাড়াও উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কুপ্রস্তাব ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগও করেছেন তিনি। অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর সকালে বিপ্লব একটি লোহার রড আগুনে পুড়িয়ে শরীরে ছ্যাঁকা দেন। এতে শরীরের বিভিন্ন অংশ মারাত্মকভাবে পুড়ে যায়। তবে হাসপাতালে যেতে না দিয়ে ঠান্ডা পানি ও ডিম ব্যবহার করে ক্ষত স্থানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা। চারদিন পর ভুক্তভোগী নিজ গ্রামে গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হর্টিকালচার সেন্টারের একাধিক কর্মচারী জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিপ্লব চন্দ্র বিশ্বাস একই অফিসে কর্মরত থাকায় তিনি একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁর সঙ্গে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সখ্য রয়েছে এবং কেউ বিরোধিতা করলে তিনি সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে হুমকি ও হামলা চালান।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “বাবুর্চিকে জনস্বার্থে বদলি করা হয়েছে। এরপরই তিনি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।”

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু তাহের হারুন বলেন, “ভুক্তভোগী দীর্ঘদিন ধরেই পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। আদালতে দায়ের করা মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সশ্রম কিংবা ১০ বছর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডও হতে পারে।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, অভিযোগের বিষয়টি তাঁর জানা আছে এবং তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয়ভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালের সমাজ//র.ন

Side banner

পথে-প্রান্তরে বিভাগের আরো খবর

Link copied!