মাদারীপুরে বছরজুড়েই নদীভাঙনের কবলে পড়ে জমি ও বসতভিটা হারাচ্ছেন হাজারো মানুষ। অথচ নদী ব্যবস্থাপনা ও ভাঙন প্রতিরোধে পরিকল্পিত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সমীক্ষা গত চার বছর ধরে আটকে আছে। এতে স্থায়ী ও টেকসই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, “বরিশাল অঞ্চলের নদ-নদীর অববাহিকা ভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা” নামে একটি প্রকল্পের অধীনে আড়িয়াল খাঁসহ মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ প্রকল্পের আওতায় সদর, রাজৈর ও কালকিনি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার, লোয়ার কুমার, কীর্তিনাশা, সাধুর খালসহ বেশ কয়েকটি নদী অন্তর্ভুক্ত।
২০২৪ সালের ২৮ মে প্রকল্পটি প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও এর কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। এখনো চলছে দরপত্র মূল্যায়নের কাজ। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা।
এর আগে “মাদারীপুর সদর, রাজৈর এবং কালকিনি উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার, লোয়ার কুমার, কীর্তিনাশা, টরকী নদী ও সাধুর খালের তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং” শীর্ষক একটি প্রকল্পের প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে। এর মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১ হাজার ৪৮২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে সম্ভাব্যতা যাচাই না হওয়ায় সেটিও অনুমোদন পায়নি।
এছাড়া মাদারীপুর সদর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীর তীর সংরক্ষণে ১৬৯.২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪.৩৫৬ কিমি পুনর্বাসন এবং ০.৫৫০ কিমি নতুন তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রস্তাবও আটকে আছে একই কারণে।
এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চলতি বর্ষায় আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার, লোয়ার কুমার, কীর্তিনাশা, পালরদী ও টরকী নদীর ভাঙনে শত শত ঘরবাড়ি ও জমি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, “নদী তীরবর্তী মানুষের জীবনমান রক্ষা ও টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য প্রকল্পটি জরুরি। চার বছরেও তা আলোর মুখ না দেখায় আমরা হতাশ। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাচ্ছে, এতে ভুক্তভোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান বলেন, “আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তরিক। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নদী ব্যবস্থাপনায় টেকসই পরিবর্তন আসবে।”
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সমীক্ষা সম্পন্ন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদী ভাঙন রোধ ও বসতভিটা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :