সুন্দরবনের নদী ও খালে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা হাজার হাজার জেলে পরিবারকে গভীর সংকটে ফেলেছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, যা এই অঞ্চলের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে উপকূলীয় কয়রা উপজেলার জেলে পরিবারগুলোর জীবনে নেমে এসেছে চরম দুশ্চিন্তা ও হতাশা। তাদের প্রশ্ন, এই দীর্ঘ সময় কীভাবে চলবে তাদের সংসার?
কয়রার দক্ষিণের জনপদ দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রামের জেলে বসির জানান, "সুন্দরবনে মাছ ধরে আমাদের সংসার চলতো। এখন কাজ নেই। সামান্য কিছু চাল পেয়েছি, কিন্তু তা দিয়ে তিন মাস চলা অসম্ভব। ছেলে-মেয়েদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।" শুধু মুর্শিদুল নন, তার মতো আরও অনেকেই একই কথা বলছেন। তাদের জীবনে সুন্দরবনের উপর নির্ভর করে চলে, তাই নিষেধাজ্ঞা তাদের জীবনে এক অসহনীয় সংকট নিয়ে এসেছে। সরকারি সহায়তা অপ্রতুল, বিকল্প কাজের অভাব উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী ৫০ হাজারেরও বেশি জেলে পরিবার রয়েছে, যারা বংশপরম্পরায় বনজীবী।
তাদের আয়ের প্রধান উৎস সুন্দরবন। কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৩ হাজার ৫২৬ জন। তবে স্থানীয়দের মতে, প্রকৃত জেলের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে সরকার থেকে মাত্র ৬৮ কেজি চাল সহযোগিতা হিসেবে দেওয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের জেলে লাবলূ বলেন, "সাগরের জেলেদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হলেও সুন্দরবনের জেলেদের জন্য তেমন কিছুই করা হয় না।
সবকিছুর দাম যখন আকাশছোঁয়া, তখন এই সামান্য সহায়তা দিয়ে আমাদের দিন কাটানো কঠিন।" জেলেদের অভিযোগ, বন বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় তারা অলস সময় পার করছেন। উপার্জন বন্ধ থাকায় খাদ্য সংকট এবং আর্থিক দুর্দশার মধ্যে দিন কাটছে তাদের। এই পরিস্থিতিতে তারা সরকারের কাছে আরও বেশি আর্থিক সহায়তা এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির দাবি জানিয়েছেন।
কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার জানান, "অনেক প্রকৃত জেলের কার্ড নেই, তাই তাদের সহায়তার আওতায় আনা যাচ্ছে না। আমরা প্রকৃত জেলেদের চিহ্নিত করে তাদের কার্ডের অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।"সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এজেডএম হাছানুর রহমান জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে জেলেদের বিকল্প খাদ্য সহায়তার জন্য মৎস্য দপ্তরে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
এই প্রস্তাবনা কবে কার্যকর হবে, সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন উপকূলের হাজার হাজার জেলে পরিবার। তাদের জীবন এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দীর্ঘদিনের এই নিষেধাজ্ঞা তাদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলছে, যা কেবল সরকারি সাহায্যের মাধ্যমে নয়, বরং টেকসই বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :