ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

শীতলক্ষ্যা পাড়ে নীরবে সেবা দিচ্ছে ‘জীবন তরী’ ভাসমান হাসপাতাল

কালের সমাজ | সাইফুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম শীতলক্ষ্যা পাড়ে নীরবে সেবা দিচ্ছে ‘জীবন তরী’ ভাসমান হাসপাতাল

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আর এ নদীর পার ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে একটি ভাসমান হাসপাতাল। প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালটি চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দাতব্য “জীবন তরী” নামে এ হাসপাতালটি ভাসমান একটি জাহাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটি দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার একাধিক স্থানে নোঙর ফেলে সুবিধাবঞ্চিত জনসাধারণের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। সম্প্রতি এ হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে গাজীপুর ও নরসিংদী দুই জেলার বাসিন্দারের নাম মাএ ফিতে গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার দড়িসোম এলাকায় খাদ্য গুদাম সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাটে নোঙ্গর করে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসার জন্য ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (আই.এফ.বি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা জাহাজের ওপর ভাসমান হাসপাতালটি চালু করে।

ইতিমধ্যে জীবন তরীর চিকিৎসা গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও নরসিংদীর পলাশের দুতীরের স্থানীয়দের মধ্যে সাড়া ফেলেছে । স্বল্প খরচে মানসম্মত চিকিৎসা পেয়ে প্রান্তিক লোকজন সন্তুষ্ঠ। হাসপাতালটি ১২ শষ্যার। এতে তিনজন চিকিৎসক রয়েছে। এদের মধ্যে একজন নাক,কান,গলা বিশেষজ্ঞ,একজন চক্ষু চিকিৎসক ও একজন অর্থোপেডিকসের।

অপরদিকে, বিশেষজ্ঞ সার্জন দিয়ে অস্ত্রপাচার  এবং হাড়জোড়া.হাড়ভাঙ্গা,পঙ্গু,জন্মগত ঠোটকাটা-তালুকাটা রোগীদের চিকিৎসা,প্লাস্টিক সার্জারিসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তাছাড়া তিনজন নার্স,দুজন কর্মকর্তাসহ মোট ৩০ জন জনবল আছে এ হাসপাতালটিতে।

জানা গেছে, ১৯৯৩ সালের ২৫ জুলাই সংস্থাটি ট্রাস্ট হিসেবে নিবন্ধন পায়। ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে ‘জীবন তরী’ নামে যাত্রা করে ভাসমান হাসপাতাল চালু করে। দেশের নদী ধারের মানুষ যারা শহর বা নগরে খুব কমই যেতে পারেন তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এটি মূলত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এর আগে ২০১৩ ও ২০১৮ সালে এই একই ঘাটে চিকিৎসা সেবা দিয়েছিল ভাসমান এই হাসপাতালটি। সরেজমিনে গিয়ে আজ সোমবার সকালে ভাসমান হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়,বেসরকারী সংস্থা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালনাধীন হাসপাতালটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নোঙর ফেলে ২০২৫ এর ৬ মে তারিখে। চিকিৎসা সেবা শুরু করে ১০মে থেকে। সুচিকিৎসা প্রদান করে ইতিমধ্যে নদীর দুইতীরের কালীগঞ্জ ও পলাশের  মানুষের মধ্যে আস্থা অর্জন করেছে। সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে গাজীপুর ও নরসিংদী জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। ভাসমান হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পানির ওপর ভাসমান সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে রোগীরা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসছেন।

৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে রোগীরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। শীতার্তপ নিয়ন্ত্রিত একটি অপারেশন থিয়েটার ও রোগীদের জন্য পৃথক বেড রয়েছে। তাছাড়া এক্স-রে, প্যাথলজিক্যাল ল্যাব, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের জন্য আলাদা কক্ষ এবং বহিঃবিভাগীয় রোগীদের জন্য অপেক্ষা করার একটি কক্ষ রয়েছে। ভাসমান এ হাসপাতালে রয়েছে দুটি স্পিডবোড। যা রোগীদের আনা-নেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা একাধিক রোগী জানান, ভাসমান হাসপাতালে কম খরচে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার আশায় এখানে এসেছি। মানুষ হাসপাতালে যায় চিকিৎসা নিতে। কিন্তু হাসপাতাল রোগীর বাড়ির ঘাটে আসে তা আগে তারা কখনো দেখিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাসমান হাসপাতালের প্রশাসক এ.কে.এম সহিদুল হক বলেন, নদীর পাড় এলাকায় বসবাসকারী সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র রোগীদের স্বল্প খরচে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। নাক, কান, গলার চিকিৎসা, অপারেশন এবং চক্ষু রোগের চিকিৎসা,অপারেশন ও সহায়ক সামগ্রীর ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে অর্থোপেডিক চিকিৎসা, ঠোঁটকাটা, তালুকাটা রোগীদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা দেয়া হয় । এখানে আমাদের কমপক্ষে এক থেকে দেড় বছর অবস্থান করার কথা রয়েছে। তাছাড়া প্রতিদিন এখানে ২০০থেকে ২২৫ জন রোগীকে আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।গাজীপুরের কালীগঞ্জসহ নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও আমাদের এখানে রোগী আসছে চিকিৎসা নিতে।ভাসমান এ হাসপাতালে সরকারী ছুটি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ বলেন, জীবন তরীর উদ্যোগ খুবই ভালো। দিন দিন অসুস্থ মানুষের জীবনের আশার আলো ছড়াচ্ছে হাসপাতালটি। স্বল্প খরচে সাধারণের মাঝে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে ভাসমান হাসপাতালটি এখানে স্থান পেয়েছে। সাধারন মানুষের মাঝে এর খবরটি পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা ব্যক্ত করেন তিনি।

কালেরর সমাজ//র.ন

Side banner

পথে-প্রান্তরে বিভাগের আরো খবর

Link copied!