২০২৪ সালের ১৭ জুলাই এক এমন দিন, যেদিন সাংবাদিক বশির হোসেন খান ফিরে এসেছিলেন শুধু শরীর নিয়ে, মনটা রয়ে গিয়েছিল সেই রক্তমাখা রাজপথেই।
সকালটা ছিল একেবারে সাধারণ। খিলগাঁও থেকে মোবাইল হাতে পল্টনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কিছুদূর যেতেই বুঝে যান, এটি আর ফিরে আসার রাস্তা নয়। পথ যেন রূপ নিয়েছে চলন্ত কবরখানায় চারপাশে লাশ, রক্ত, চিৎকার আর ধোঁয়ার কুন্ডলি।
পেশাগত পরিচয়ও সেদিন বাঁচাতে পারেনি বশিরকে। পুলিশি লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট—সবকিছুর মাঝেও তিনি ছুটেছেন সত্যের খোঁজে। তার ভাষায়, “কারণ আমি জানি, কেউ না কেউ তো ইতিহাসকে লিখে যাবে। আর সেই কেউটা আমি নিজেই হতে চেয়েছি।”
তার সঙ্গে ছিলেন আরও একজন সাহসী সহযোদ্ধা জান্নাতুর রহমান। গুলির মধ্যে থেকেও তার হাতে ছিল ক্যামেরা, চোখে আগুনের মত সাহস।
বশির তাকে থামতে বলেছিলেন। কিন্তু জান্নাত বলেছিলেন, “সত্যকে পেছনে রেখে কেউ নিরাপদ থাকতে পারে না।”
সেই দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বশির লিখেছেন, “এই শহরটা আজ আর মানুষ রাখে না, শুধু লাশ রাখে। কিন্তু থামিনি। কারণ এই পেশা শুধু পেটের দায় নয়, আত্মার দায়িত্ব।”
তিনি বলেন, তারা সেদিন শুধু খবর তোলার জন্য নয়, সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
“ভয়ে গা শিউরে উঠেছে, চোখে জল এসেছে, তবু পিছু হটিনি। কারণ মৃত্যুর থেকেও বড় ভয় ভুলে যাওয়া। আমরা দাঁড়িয়ে থেকেছি, যাতে কেউ ভুলে না যায় এই সময়, এই কান্না, এই লাশের শহর।”
সাংবাদিকতা পেশার গভীর দায়িত্ববোধ, সাহস ও আত্মত্যাগের এক বাস্তব গল্প এটি। যেখানে সত্যই ছিল শেষ ঠিকানা।
-বশির হোসেন খান, বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক জনবাণী
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :