বহুল আলোচিত ও অভিযোগের মুখে থাকা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ছামিউল হক এখনো বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সাবেক স্বৈরাচার সরকারের সময়ে ময়মনসিংহে দায়িত্ব পালনকালে ছামিউল হকের বিরুদ্ধে সরকারি পদে থেকে ঠিকাদারি, অফলাইনে টেন্ডার, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া, কমিশন নেওয়া এবং টেন্ডার টেম্পারিংয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় সরকার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এসব অভিযোগ জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
২০২১ সালে অভিযোগের ভিত্তিতে ছামিউলকে ময়মনসিংহ থেকে শেরপুরে বদলি করা হয়। তবে একই পদে পুনরায় ময়মনসিংহে ফিরিয়ে এনে আবার শেরপুরে পাঠানো হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই ঘুরপাকের মধ্যেও তাঁর দুর্নীতির ধারা বন্ধ হয়নি।
ময়মনসিংহে দায়িত্ব পালনকালে গজিয়াবাড়ী মাঠে বালু ভরাট ছাড়াই ৩ লাখ টাকা উত্তোলন, সীমান্তপ্রাচীর নির্মাণে অনিয়ম করে ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে পুরনো সামগ্রী ব্যবহার ও রংয়ের কাজ দেখিয়ে আরও ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, ছামিউল হক রাজনৈতিক প্রভাবশালী সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী মারুফা আক্তার পপির ছত্রচ্ছায়ায় থেকে দুর্নীতির সুবিধা ভোগ করেছেন। তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের আশীর্বাদেও তিনি প্রভাব বিস্তার করেন। ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের অভিযোগ, ছামিউল হক টেন্ডারের গোপন রেট ফাঁস করে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেন। প্রতিটি ওয়ার্ক অর্ডারে ৫ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন আদায় করতেন তিনি।
এক ঠিকাদার জানান, শুধু চলতি বছরের জুন মাসেই ছামিউলের পছন্দের ঠিকাদাররা অগ্রিম বিল ও অন্যান্য সুবিধার মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া ‘ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প’-এ (খরচ ৪০ কোটি ৯০ লাখ টাকা) বিপুল অর্থ লোপাট হলেও পৌরবাসীর ঘরে আজও সুপেয় পানি পৌঁছেনি।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প বিল ছাড় করাতে হলে ছামিউলকে ৩% পর্যন্ত ঘুষ দিতে হতো। ফাইলের সঙ্গে টাকা না দিলে দিনের পর দিন বিল আটকে রাখা হতো। অনেকে ন্যায্য বিল পেতে মাসের পর মাস দৌড়াদৌড়ি করেছেন। এসব দুর্নীতির কাজ পরিচালনায় তাঁর আশপাশে একটি ‘সিন্ডিকেট’ কাজ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ছামিউলের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁর ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
ভুক্তভোগীরা বলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পরও প্রশাসনের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজরা বহাল থেকে দুর্নীতির ধারা অব্যাহত রেখেছেন। ছামিউল হকের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :