সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের ইটালী পূর্বপাড়া গ্রামে একটি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সমাজপতিদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী পরিবারটি জানিয়েছে, তাদের বাড়ির চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, ফলে তারা কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারটির প্রধান, কামরুজ্জামান ওরফে খয়রুজ্জামান, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিবেশী মৃত সেরাজুল মাস্টারের ছেলে আরিফ, ওয়াদুদ, আকবর মৌলভীর ছেলে তাইনুছ, তুরাপ খাঁনের ছেলে তাওহিদ, তামজীদ এবং আবদীন খানের ছেলে ময়নাল খানের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জের ধরে তাদের বাড়ি চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়।
কথিত সমাজপতি এবং বিএনপি নেতা তাইনুছ ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেন, ইব্রাহিম এবং ময়নাল খাসহ আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে এই অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের হুমকিতে স্থানীয় লোকজন খয়রুজ্জামান ও তার পরিবারের সাথে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, কেউ যদি তাদের সঙ্গে কথা বলে বা তাদের পরিবহনে উঠায়, তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় অভিযোগ দায়েরের পর প্রশাসন থেকে বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে, খয়রুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, কারণ তারা বাড়ির বাইরে বের হতে পারছেন না, এমনকি তাদের গরুর খামারের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যও সংগ্রহ করতে পারছেন না।
এ ধরনের ঘটনা ব্যক্তিগত বিরোধের বহিঃপ্রকাশ হলেও, এর পেছনে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষমতার অপব্যবহার রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি উদাহরণ, যা সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি স্বরূপ। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে এবং ভুক্তভোগী পরিবারটি তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
এই ঘটনা স্থানীয় জনগণের মনে ভীতি এবং অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। প্রশাসন যদি দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে এটি ভবিষ্যতে আরও বড় আকারের সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। সমাজপতিদের ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে এবং সাধারণ মানুষের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন।
সিরাজগঞ্জের এই ঘটনা দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে প্রশাসনকে সতর্ক হতে হবে। ঘটনাটি শুধু একটি পরিবারের সমস্যা নয়, বরং একটি বৃহত্তর সামাজিক সমস্যারই প্রতিফলন। এর সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন যাতে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আইনের শাসন বজায় থাকে।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :