সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই স্থানীয় হাট-বাজারে মাছ ধরার উপকরণের বিক্রি বেড়েছে। এই উপকরণগুলোর মধ্যে রয়েছে জাল, চাঁই, ধিয়াল, ধুন্ধি, চাবি (ছোট পলো), খালই ইত্যাদি। বাঁশ ও বেতের তৈরি এই কুটির শিল্পের পণ্যগুলো স্থানীয় কারিগররা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন। ফলে আর্থিকভাবে তারা লাভবান হচ্ছেন।
সলঙ্গা থানায় প্রায় শতাধিক পরিবার সারা বছর বাঁশের তৈরি কুটির শিল্পের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকেই দীর্ঘদিনের এই পেশায় স্বাবলম্বী হয়েছেন। ভেংড়ী গ্রামের কারিগর খিতিশ চন্দ্র জানান, আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাব বিভিন্ন পেশায় পড়লেও বাঁশ-বেতের কুটির শিল্প এখনও টিকে রয়েছে। যদিও প্রযুক্তির কারণে পেশাদার অনেক কর্মী অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন, তবুও এই শিল্পের সাথে জড়িতরা এখনও মোড়া, চেয়ার, দোলনা, ঝুড়ি, দাড়ি-চাটাই, খাঁচা ইত্যাদি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বর্ষা ঋতুতে যখন নদী-নালা ও খাল-বিল পানিতে ভরে যায়, তখন স্থানীয় মানুষ ও মৎস্যজীবীরা ধুন্ধি, জাল, ভাইর, চাবি, পেঁচা দিয়ে মাছ ধরায় মেতে ওঠেন। এই সময় বাজারে এসব উপকরণের চাহিদা বেড়ে যায়। উত্তর পাড়ার কুটির শিল্পী সবুজ শীল জানান, আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত এসব উপকরণ বেশি বিক্রি হয়। এই তিন মাসে কারিগররা মোটা অংকের আয় করেন, যা সারা বছরের আয়ের একটি বড় অংশ হিসেবে গণ্য হয়।
কুটির শিল্পের দক্ষ কারিগরগণ মোরাল বাঁশের শলা, তালের আঁশ, লাইলং সুতা, ও গুনা তার দিয়ে ধুন্ধিয়া, ভাইর, চাবি, পেঁচা, খালই ইত্যাদি তৈরি করেন। তিনি আরো বলেন, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার সলঙ্গা হাটে একটি ছোট বড় ধুন্ধি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা জোড়া বিক্রি হয়। খালই ১০০ থেকে ২০০ টাকা জোড়া বিক্রি হয়। পাশাপাশি কারেন্ট জাল কিনে এনে হাত বা কেজি হিসেবে বিক্রি করে কিছুটা লাভ হয়। মাছ ধরার উপকরণের পাশাপাশি কারিগররা ডালা, কুলা, খাঁচা, চালুন, ওড়া (মাটি কাটার টুপরী), খালই বিক্রি করেন।
কুটির শিল্পী জবার জানান, বাড়িতে বসে তৈরি করা বিভিন্ন উপকরণ স্থানীয় সলঙ্গা হাটসহ আশপাশের বাজারে বিক্রি করেন। এভাবে তিনি এবং অন্যান্য কারিগররা তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ ভালোভাবে করতে সক্ষম হন।
সলঙ্গার এই কুটির শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্ষা মৌসুমে এ ধরনের পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় কারিগররা আর্থিকভাবে লাভবান হন এবং স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়। তবে, আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এই শিল্পের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। এছাড়া, এই শিল্পকে আরও উন্নত করতে এবং এর বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার, যাতে স্থানীয় কারিগররা আরও বেশি উপকৃত হন এবং তাদের পেশা টিকে থাকে।
সলঙ্গায় বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার উপকরণ বিক্রির ধুমে স্থানীয় কুটির শিল্পের কারিগররা লাভবান হচ্ছেন।
আশা করা যায়, সঠিক সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
কালের সমাজ/ জ.র./ সাএ
আপনার মতামত লিখুন :