২০২১ সালের ৯ এপ্রিল; পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারযুদ্ধ তখন তুঙ্গে। কয়েক দফা ভোটগ্রহণও হয়েছে। মধ্যমগ্রামে বৈকালিক রোড শো শেষ করে অমিত শাহ রওনা হয়েছেন বিমানবন্দরের দিকে। দিল্লি থেকে আগত বিজেপির এক ‘মিডিয়া ম্যানেজার’ মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে পরিচিত এক স্থানীয় বাসিন্দাকে প্রশ্ন করলেন, মধ্যমগ্রামের ফলাফল কী হবে? নির্বিকার জবাব এল, আপনারা হারবেন। চিন্তিত বিজেপি পদাধিকারী বলেছিলেন, হারব কেন? জাঁকজমক তো ভালই হল!
আনন্দবাজার জানায়, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন সম্পর্কে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের ধারণা কেমন ছিল, ওই কথোপকথনে তার আভাস ছিল। কিন্তু পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে বিজেপির সেই পূর্ববর্তী ধারণায় বদলের আভাস মিলছে। হাঁকডাক কম। ‘যোগদান মেলা’ করে বা চার্টার্ড বিমানে উড়িয়ে দলবদল করানো নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে মুড়ি-মুড়কির জনসভা করানোর পরিকল্পনাও আপাতত মুলতুবি।
বিজেপি বলছে, হাঁকডাকের নির্বাচন নয়। এ বার অঙ্ক আর কৌশলের নির্বাচন। তিন অঙ্ক এবং তিন কৌশল।
অংক ১: এসআইআর। সর্বশেষ নির্বাচনের তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে ফারাক ৪১ লক্ষের আশেপাশে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ২ কোটি ৩৩ লক্ষ ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ২ কোটি ৭৪ লক্ষের মতো।
বিজেপি মনে করছে, ‘অস্তিত্বহীন’ ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার পরে ভুয়া ভোট দেয়ার অবকাশ কমে যাবে। তৃণমূল আর বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে যা ব্যবধান, তার চেয়ে অনেক বেশি নাম ভোটার তালিকা থেকে ইতিমধ্যেই বাদ পড়ে গেছে বলে কমিশন সূত্রের দাবি। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
অংক ২: অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং স্বচ্ছ ভোটগ্রহণ এবং গণনা নিশ্চিত করা। তার জন্য নির্বাচন কমিশনের কঠোর ভূমিকা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসাবে ‘কঠোর’ আধিকারিক পাঠানো, কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি বদলসহ একগুচ্ছ দাবি কমিশনে ইতিমধ্যেই বিজেপি পেশ করেছে। এসবের মাধ্যমে ভোটের দিন বুথে এবং বুথের বাইরে সন্ত্রাসের আবহ রোখা গেলেই ‘কেল্লা ফতে’ বলে বিজেপি নেতারা হিসাব কষেছেন।
অংক ৩: শুধু তৃণমূলের ভোট কমানো নয়, নিজেদের ভোট বৃদ্ধি নিয়েও অংক কষছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির একাধিক নেতার ‘বিশ্বাস’, এবারের নির্বাচনে বিজেপির ভোট আগের চেয়ে কিছুটা বাড়বে। কারণ, বাম-কংগ্রেসের ভোট আগের চেয়েও কমবে এবং তা বিজেপির ঝুলিতেই জমা হবে।
তবে বিজেপির এই তিনটি অংকের একটিও পুরোপুরি মিলবে কি না, সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই।
প্রথমত, এসআইআর-এর মাধ্যমে ভোটার তালিকা ঝাড়াই-বাছাই হয়ে গেলে তৃণমূলের ঠিক কতটা ক্ষতি, তার স্পষ্ট হিসাব বিজেপি নেতাদের কাছে এখনও নেই।
দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় বাহিনীর এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে প্রতি বছরই ভোটের আগে বিজেপি নেতৃত্ব আশাবাদী থাকেন। কিন্তু ভোটের দিনের হালহকিকত দেখে প্রতিবারই নিরাশ হয়ে প়ড়েন।
তৃতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গে ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে ইতিমধ্যেই প্রান্তিক হয়ে যাওয়া বাম-কংগ্রেসের থেকে কত ভোট বিজেপি টানতে পারবে, শতাংশের বিচারে তা কতটুকুই বা হবে, তাও ভাবার বিষয়।
কালের সমাজ/এসএমআর


আপনার মতামত লিখুন :