ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২
জনমনে স্বস্তি ফেরাতে

চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য বন্ধে কঠোর অবস্থানে নরসিংদী জেলা পুলিশ

কালের সমাজ সাইফুল ইসলাম,স্টাফ রিপোর্টার জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৪:০২ পিএম চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য বন্ধে কঠোর অবস্থানে  নরসিংদী জেলা পুলিশ

সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজির ঘটনা সহ বিভিন্ন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে নরসিংদী জেলা পুলিশ। পুলিশের এমন কঠোর অবস্থান নেওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঘটে যাওয়া চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির অভিশাপ থেকে যেন অনেকাংশে মুক্তি পেতে চলছে নরসিংদীবাসী।


এক কথায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশের রীতিমতো ‍‍`যুদ্ধ ঘোষণার কারণে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গুলোতে ফিরিয়ে এনেছে স্বাভাবিক গতি। ফলে এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে তুলছে নরসিংদীর পুলিশ। স্বস্তি  ফিরতে শুরু করেছে জেলাবাসীর মনে।

 

নরসিংদীর পুলিশ সুপার  মো.আব্দুল হান্নানের দিকনির্দেশনায় নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম চাঁদাবাজি সহ যেকোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে জেলার এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ঘুরে ঘুরে জনবহুল এলাকা ও বাজারসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে মাইকিং করে মানুষদের সচেতন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। পুলিশের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।


রাজধানী ঢাকার অদূরে তাঁতশিল্পের শহর নরসিংদী। দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় চাঁদাবাজ চক্রের হাতে জিম্মি ছিল জেলার প্রায় সব কয়টি উপজেলা।


এ জেলার বাসস্ট্যান্ড ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে পরিবহন কাউন্টার, খাবার হোটেল, ক্ষুদ্র দোকানপাট ও হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে আসছিল বেশ কয়েকটি চক্র।


চাঁদা দিতে অস্বীকার করলেই নেমে আসতো হামলা, ভাঙচুর ও শারীরিক লাঞ্ছনার মতো ঘটনা। এমনকি চাঁদা আদায়ের ক্ষমতা নিয়ে বিভিন্ন চক্র গুলো নিজেদের মধ্যেই হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনাও ঘটিয়েছে অহরহ।


বিশেষ করে পৌরসভার টোলের নাম করে রাস্তায় চলাচলরত যানবাহন থামিয়ে অবৈধভাবে টাকা আদায় করে আসছিল চক্রগুলো। পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুধু নির্দিষ্ট টার্মিনাল থেকে টোল আদায়ের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও  ইজারাদারের লোকেরা অবৈধভাবে সড়কে চলাচলরত যানবাহন থামিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায় করে আসছিল। তাদের দাবিকৃত চাঁদা পরিশোধ না করলে চালকদেরকে প্রকাশ্য মারধর করার ঘটনাও ছিল যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। যা সাধারণ মানুষের মনে এক ধরণের ভয়-ভীতির সঞ্চার করেছিল।


ঠিক এমন পরিস্থিতিতে কঠোর অবস্থানের হুঁশিয়ারি দিয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে পুলিশ।
গত কয়েক মাসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত বিপুল সংখ্যক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে চাঁদাবাজির মামলা সহ অপরাধ অনুযায়ী বিভিন্ন মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।


একই সাথে প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার, সাধারণ সিএনজি-অটো চালক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে এবং চাঁদাবাজদের কোনো রকম চাঁদা না দিতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। কোনো চাঁদাবাজ এসে চাঁদা চাওয়ামাত্র থানা পুলিশকে জানানোর কথা বলে নিজের ফোন নাম্বারও দিয়ে আসছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। ফলে জনমনে নরসিংদী জেলা পুলিশের প্রতি ব্যাপক সাড়া জাগানোর পাশাপাশি এ জেলায় বসবাসরত মানুষের মাঝে স্বস্তি  ফিরতে শুরু করেছে ।  


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েক জন কাউন্টার মালিকরা জানান, "চাঁদাবাজির কারণে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। প্রতিদিন চাঁদা দিয়ে লাভ তো দূরে থাক, উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছিল। প্রতিবাদ করলেই হামলার শিকার হতে হতো। একই সুর সিএনজি ও অটো চালকদেরও। জেলার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চাঁদা দিতে দিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল তাদের। এক কথায় চাঁদাবাজদের কারণে অসহায় হয়ে পড়ে ছিল খেটে খাওয়া এসব মানুষ।


এই পরিস্থিতি এখন অনেকটা নাই বললেই চলে। নরসিংদীর পুলিশের নিয়মিত টহল আর সামিজক সচেতনা বৃদ্ধি ও অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা অব্যাহত রাখার ফলে চাঁদাবাজরা এখন আর সাহস পাচ্ছে না।
এভাবে পুলিশের তদারকি অব্যাহত থাকলে জেলার চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম সহ সকল ধরণের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কমে যাবে বলে ধারণা সচেতন মহলের।


"চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে জানিয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, পুলিশের আইজিপি ও জেলা পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় নরসিংদী জেলার প্রতিটি থানাধীন এলাকার চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ব্যবসায়ীরা যাতে নির্ভয়ে ব্যবসা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।


তিনি আরও বলেন, কেউ যদি চাঁদাবাজি করতে আসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইন ব্যবহার করা হবে।
এক কথায় এ জেলায় কোনো চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের আস্তানা থাকবে না। ‘সকল চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের ঠিকানা একটাই,সেটি হবে জেলখানায়’ বলেও মন্তব্য করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
 
চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসদের বিরুদ্ধে  অভিযান  সম্পর্কে  জানতে চাইলে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মো: আব্দুল হান্নান জানান , সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজির ঘটনা সহ বিভিন্ন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে নরসিংদী জেলা পুলিশ,এবং এটি আমাদের চলমান প্রক্রিয়া  যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।


কালের সমাজ/ সা.ই./সাএ

 

Side banner

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!