বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৫ জন শিক্ষার্থীর কেউই পাস করতে পারেনি। পরীক্ষার এমন করুণ ফলাফলে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, স্কুলটির নিয়মিত ৭ জন শিক্ষার্থী গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অধীনে এবং অনিয়মিত ৮ জন শিক্ষার্থী শহীদ আব্দুল হামিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার দিন দেখা যায়, সবাই ফেল করেছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে এবং স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
রূপসীপাড়া ইউনিয়নের সদরে অবস্থিত এ বিদ্যালয়টি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এবং এটি এমপিওভুক্ত। দোতলা ভবন, ছাত্রাবাস, খেলার মাঠসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম (ভারপ্রাপ্ত), সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক কাজী আলাউদ্দিন, ইসলাম শিক্ষা শিক্ষক মো. সলিমুল্লাহ, গণিত শিক্ষক সালাউদ্দিন আল মামুন, কৃষি শিক্ষক বিপুল কান্তি নাথ, ইংরেজি শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক মাহাবুব আলম এবং ভৌত বিজ্ঞান শিক্ষক মহসিন আলী।
অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিক্ষকরা নিয়মিত উপস্থিত হন না, ক্লাস নেয়াও অত্যন্ত সীমিত। বিদ্যালয়ে কোনো কার্যকর তদারকি নেই। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে না পারায় অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
স্থানীয় অভিভাবক মো. কামাল হোসেন বলেন, “আমার ছেলে এবছর এসএসসি (অনিয়মিত) দিয়েছে। কেউ পাস করতে পারেনি—এটা আমাদের এলাকার জন্য লজ্জাজনক।”
স্থানীয় বাসিন্দা সাখাওয়াতুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষকরা নিজেদের পদ-পদবি নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত। কেউ নিজেকে প্রধান শিক্ষক, কেউ এনটিআরসিএ নিয়োগপ্রাপ্ত বলে দাবি করেন। ফলে শিক্ষার পরিবেশ একেবারেই ভেঙে পড়েছে।”
বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, টাকার অনিয়ম হয়েছে। প্রধান শিক্ষক বেলা ১১টা বা ১২টার আগে আসেন না, সপ্তাহে ১-২ দিন স্কুলে উপস্থিত থাকেন। ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি খাতা নেই, পানিরও কোনো সুব্যবস্থা নেই।
বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক আনোয়ার হোসেন এসব অনিয়ম তুলে ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন বলে জানা গেছে।
বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহিদা সুলতানা আফরিন জানায়, “দুয়েকটা ক্লাস হয়, সবসময় হয় না। ৪৬ জনের মধ্যে ২০-২৫ জন আসে। এমন স্কুলে পড়াশোনা করে লাভ কী?”
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী আলাউদ্দিন বলেন, “এবার ৭ জন নিয়মিত ও ৯ জন অনিয়মিত শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তারা টেস্ট পরীক্ষায়ও ফেল করেছিল। অভিভাবকদের অনুরোধে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হয়েছিল। তারা বাসায়ও পড়াশোনা করে না।”
রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) শাহ আলম বলেন, “দেশের অন্যান্য বিদ্যালয়ে যেখানে শতভাগ শিক্ষার্থী এ-প্লাস পায়, সেখানে আমাদের স্কুলে সবাই ফেল করে। এটা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জার বিষয়।”
লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন বলেন, “বিদ্যালয়টির ফলাফল সম্পর্কে শুনেছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে এলাকার মানুষ এখন বিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তনের দাবি তুলেছে।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :