টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে মাদারীপুর পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, শহরের রাস্তায় মানুষকে মাছ ধরতেও দেখা যাচ্ছে। শনিবার শহরের বিসিক শিল্পনগরী, পুরান বাজার, শহীদ হারুন সড়কসহ একাধিক এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়।
নদী-খাল-পুকুরের পানি উপচে রাস্তায় চলে আসায় মাছ উঠে এসেছে। অন্যদিকে, ডোবা, নালা ও পরিত্যক্ত খালগুলোর নোংরা পানি রাস্তায় মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অনেক এলাকায় বসবাস অনুপযোগী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
পুরান শহরের বাসিন্দাদের ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বের না হওয়ায় শিশুদের মধ্যে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
শহীদ হারুন সড়কের ব্যবসায়ী মো. জুয়েল বলেন, “টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে আমাদের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট হাঁটু পানির নিচে চলে গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নিলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। আপনারাই তো দেখছেন, মানুষ রাস্তায় মাছ ধরছে!”
এ বিষয়ে পৌরসভার কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ তাওহীদ হোসেন বলেন, “আমরা পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করেছি। তবে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় কাজ কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। অচিরেই সমস্যার সমাধানে সক্ষম হবো।”
মিলন সিনেমা হলের সামনে লন্ড্রি ব্যবসায়ী স্বপন বলেন, “মিলন সিনেমা হল থেকে ১ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় গর্ত তৈরি হয়েছে। স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য চলাচল দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন ও রাস্তা মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।”
রবিবার ১৩ই জুলাই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কাঠপট্টি ব্রিজের পাশ দিয়ে যাওয়া ইট বিছানো সড়কটি একপ্রকার মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। পরিত্যক্ত খালের নোংরা পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় আশপাশের এলাকাবাসী ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
দুর্গন্ধে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে এই এলাকার বাসিন্দাদের। অনেকেই পানিবন্দি অবস্থায় নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ।
এদিকে শহরের পুরান বাজার হরিজন কলোনি হাঁটু পানি। কলোনির প্রায় সবগুলো ঘরের ভেতর পানি ঢুকে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে আছেন প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। হরিজন কলোনির রাস্তা নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে সেখানে পানি ঢুকে পড়ে বলে জানান বাসিন্দারা।
হরিজন কলোনি বাসিন্দা তাপস বলেন বলেন, “আমরা পৌরসভার মধ্যে থেকেও সব সময় অবহেলায় থাকি। দীর্ঘদিন যাবত আমাদের এই সমস্যা। এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি উঠে যায়। সেখানে আজ প্রায় পাঁচ-ছয় দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে—আমাদের কী অবস্থা তা আপনারা দেখতেই তো দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের দাবি, আমাদের রাস্তা উঁচু করে দিন। এই কলোনি এখন বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।”
এদিকে বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে বাতিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এতে রাতের বেলা চলাচল আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সড়ক বাতি পরিদর্শক মো: মোহাসিন তালুকদার বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় সড়ক বাতির সমস্যা হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, এক-দু’দিনের মধ্যেই পুরো শহরের বাতিগুলো সচল করা সম্ভব হবে।”
তিনি আরও বলেন, “পৌরবাসীর সমস্যার সমাধানে আমরা সর্বদা পাশে আছি।”
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :