ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

শেরপুর হাসপাতালে চরম অব্যবস্থা, রোগীদের ভোগান্তি

কালের সমাজ সাফিজল হক তানভীর, শেরপুর জুলাই ৯, ২০২৫, ০১:৩৭ পিএম শেরপুর হাসপাতালে চরম অব্যবস্থা, রোগীদের ভোগান্তি

শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের চিত্র এখন যেন মানবতার চোখে সহ্য করার মতো নয়। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা গরিব ও অসহায় মানুষদের যেনো পড়তে হচ্ছে এক ভয়াবহ ভোগান্তির মধ্যে। অপরিস্কার ও দুর্গন্ধযুক্ত ওয়ার্ড, ব্যবহারের অযোগ্য টয়লেট আর অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে কাটছে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত। হাসপাতালের এই করুণ অবস্থা যেন প্রশাসনের চোখে পড়ে না এমনই অভিযোগ রোগী ও তাদের স্বজনদের।


হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে চোখে পড়ে অপরিষ্কার পরিবেশ। ফ্লোরে জমে থাকা ময়লা, বাথরুমে দুর্গন্ধে দাঁড়ানোই দায়। রোগীরা বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের কোনে বসে কিংবা মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ অবস্থায় সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি নানারকম রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।


এদিকে, সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে হাসপাতালে নেই কোনো নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। লোডশেডিং হলেই পুরো হাসপাতাল অন্ধকারে ছেয়ে যায়। জরুরি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ওটি (অপারেশন থিয়েটার) পর্যন্ত অচল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে রোগীদের চলাচলের সিঁড়িতে কোনো আলো না থাকায় ঘটে যেতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।


একজন রোগীর স্বজন রফিকুল ইসলাম বলেন,  আমার মায়ের জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে ফিরে দেখি কারেন্ট নাই, উনি একা অন্ধকারে ভয় পেয়ে বসে ছিলেন। বাথরুমে যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। কেউ কেয়ার করছে না। আরেকজন ক্ষোভ ঝাড়লেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি, কিন্তু মনে হয় জেলখানায় আছি।


এই বিষয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগী আবু সাইদ দিনার বলেন, আমি বুকের ব্যাথার সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে সব অন্ধকার হয়ে যায়। মশা, মাছি কামড়ায়, গরমে ঘুমানো যায় না। ওষুধ খেতে গেলে পানি খুঁজে পাই না। বাথরুমে যাওয়ার মতো অবস্থাও থাকে না। এত অন্ধকারে আমি চলাফেরা করতে পারি না,  ফসকে পড়ে যাওয়ার ভয় হয়। মনে হয়, আমরা গরিব মানুষ আমাদের জীবন কোন মূল্য নেই।  একটা জেলা হাসপাতালে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই এটা মেনে নেওয়ার মত না।


হাসপাতালে কর্মরত এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরাও অস্বস্তিকর পরিবেশে কাজ করছি। বিদ্যুৎ না থাকলে পেশেন্টদের সেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।


এই অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের চিত্র দীর্ঘদিন ধরে চললেও, আজও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রতিদিনই বাড়ছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ।


জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের কাছে দাবি শেরপুর জেলা হাসপাতালের জরুরি সংস্কার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিজস্ব জেনারেটর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক। না হলে একদিন এই অব্যবস্থাপনা কেড়ে নিতে পারে বহু নিরীহ প্রাণ।


শেরপুর জেলা হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা.মুহাম্মদ শাহীন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি হাসপাতালের পরিষেবা মানোন্নয়নের জন্য। তবে জনবল সংকট, পর্যাপ্ত পরিষ্কারকর্মীর অভাব এবং দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়া অবকাঠামোর কারণে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী দিনে রোগীরা যেন আরও ভালো সেবা পান, সে জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। রোগীদের ভোগান্তি কমাতে সাধারণ জনগণের সহযোগিতাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

 

কালের সমাজ/ শে. প./সাএ

 

 

Side banner
Link copied!