ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নির্মাণে দেরি: শাহজাদপুরে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা

কালের সমাজ | জলিলুর রহমান জনি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জুলাই ২৬, ২০২৫, ০৩:৪১ পিএম রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নির্মাণে দেরি: শাহজাদপুরে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আগত সরকার। স্বাভাবিকভাবেই আমরা আশান্বিত হয়েছি, বিপুল সংখ্যক ছাত্রের প্রাণের বিনিময়ে যে সরকারে এলো, তারা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সীমাহীন ‍দুর্ভোগ নিরসনে কালক্ষেপণ করবে না। কিন্তু আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, হতাশ এবং ক্ষুব্ধ।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালে। প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য সরকার একটি টাকাও বরাদ্দ দেয়নি। পূর্বের সরকারের সময়ে আমরা দেখেছি, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে প্রতিষ্ঠিত হলেও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৎকালীন জমিদারির অন্তর্গত খাস জমিতেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হওয়ার কথা। ভূমি অধিগ্রহণের ঝামেলা এবং পরিবেশের কোনোরূপ ক্ষতি ছাড়াই সেখানে নান্দনিক একটি ক্যাম্পাস নির্মাণ করা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও এর স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে কোনো অর্থই বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

পরপর সাতবার ডিপিপি সংশোধন করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিকে বিবেচনায় রেখে সর্বশেষ ৫১৯.১৫ কোটি টাকার ডিপিপি উপস্থাপন করে, যা পরিকল্পনা বিভাগে গত ৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আলোচিত হয়।

একনেক সভায় সভাপতি হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়টি কেবল স্থাপনের কথাই বলেননি, কবিগুরুর নামের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক গুণগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন আন্তর্জাতিক মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থাপিত হয় সে ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন।

একনেক সভায় প্রায় সবাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছালেও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসে এসে সরেজমিনে দেখতে চাইলেন। গত ১৬ জুন তিনি শাহজাদপুরের বুড়ি পোতাজিয়ায় গিয়ে ক্যাম্পাসের স্থান দেখে গেলেন; প্রতিবেদন জমা দিলেন। উক্ত প্রতিবেদনে তিনি কী লিখলেন, আমরা তা জানি না।

প্রধান উপদেষ্টার ইতিবাচক মনোভাব ও উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পরিদর্শনের পর একাধিক একনেক সভা অনুষ্ঠিত হলেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পটি এজেন্ডাভুক্ত না হওয়া দুরভিসন্ধিমূলক কি না তা নিয়ে আশঙ্কার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। কেন বা কী কারণে এমনটি হচ্ছে, তার কোনো ব্যাখ্যাও সরকার আমাদেরকে জানায়নি। এটি কেবল রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি উপেক্ষা নয়, এটি বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্রসমাজের স্বার্থের প্রতি অবজ্ঞা।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ আজ চূড়ান্তরূপে হতাশ। শ্রেণিকক্ষের সংকট, আবাসন সংকট, নিরাপত্তাহীনতাসহ ক্যাম্পাসহীনতার নানাবিধ অসুবিধার কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা, দক্ষ জনসম্পদ হয়ে ওঠা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও ক্যাম্পাসহীনতার দুর্ভোগের সঙ্গে লড়াই করে কাজ করতে হচ্ছে।

কিন্তু এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। আজ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে এবার আমরা রাজপথেই থাকবো। যতক্ষণ না রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রকল্প অনুমোদন হয়, আমরা রাজপথেই অবস্থান করব। আমাদের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।

কালের সমাজ//হ.র

Side banner
Link copied!