খুলনা মহানগরীর অন্যতম প্রধান প্রবেশদ্বার সোনাডাঙ্গা থানার সামনে থেকে জয়বাংলা মোড় পর্যন্ত বাইপাস সড়কটির বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসী ও পরিবহন চালকদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক দিয়ে ১৮ জেলার যানবাহন খুলনায় প্রবেশ করে। কিন্তু সংস্কারে উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে সড়কটি এখন কার্যত মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
ময়ূরী সেতুর পূর্বপাশের অংশ খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) এবং পশ্চিম অংশ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কেসিসি সম্প্রতি সড়কের একাংশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করলেও মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষাকালে খানাখন্দে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়া রাস্তায় এখন ইটের সোলিং দিয়ে সাময়িক সমাধানের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, এলজিইডির নিয়ন্ত্রিত অংশে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। মাত্র আড়াই বছর আগে পুনর্নির্মাণ হলেও ওই অংশটিও এখন নাজুক অবস্থায় পড়ে আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনাডাঙ্গা থেকে ময়ূর ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দে জমে থাকা পানিতে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। দুই থেকে আড়াই ফুট গভীর গর্তের কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। পরিবহন চালকরা জানান, প্রায়ই বাস ও ট্রাক উল্টে যাত্রীদের প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এতে আন্তঃজেলা যাত্রীসেবায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
২০১৩ সালে ২০ কোটি টাকায় সড়কটি নির্মাণ করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। পরে কেসিসি ও এলজিইডিকে সড়ক হস্তান্তর করা হয়। কেসিসি সূত্রে জানা যায়, সোনাডাঙ্গা থেকে ময়ূর ব্রিজ পর্যন্ত ৭৮০ মিটার সড়ক চারলেনে উন্নীত করতে ২১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তবে জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে টেন্ডার আহ্বান করা যাচ্ছে না। অনেক সীমানা পিলার নেই, অধিগ্রহণকৃত জমিতে গড়ে উঠেছে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কেডিএ কিছু অংশ উচ্ছেদ করলেও পুরো কাজ শেষ হয়নি।
কেসিসির প্রধান পরিকল্পনাবিদ আবির-উল-জব্বার জানান, কেডিএ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত তারা দরপত্র আহ্বান করতে পারছেন না। জনদুর্ভোগ লাঘবে আপাতত ইটের সোলিং করা হচ্ছে।
কেডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মারতোজা আল মামুন বলেন, সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম জানান, সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে ইতোমধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে টেন্ডার আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব অ্যাড. শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, “খুলনার প্রতিটি প্রবেশদ্বারের বেহাল অবস্থা এখন জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বারবার অনুরোধ করলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।”
কালের সমাজ // র.ন


আপনার মতামত লিখুন :