বাংলার প্রকৃতির অন্যতম অনন্য শোভা ছিল বাবুই পাখি ও তাদের ঝুলন্ত বাসা। সিরাজগঞ্জের গ্রামীণ আকাশে একসময় দেখা মিলত সারি সারি বাবুই বাসা। তালগাছ, খেজুরগাছ কিংবা নারিকেল গাছের ডালে ঝুলে থাকা সেই বাসা যেন গ্রামের আকাশকে সাজিয়ে তুলত শিল্পীর আঁকা ছবির মতো। কিন্তু আজ সেই দৃশ্য যেন অতীত স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের অনেক প্রবীণ মানুষ আবেগ নিয়ে বলেন, "একসময় আমাদের গ্রামের সব খেজুরগাছে ঝুলত বাবুই পাখির বাসা। সকালে ঘুম ভাঙত তাদের ডাক শুনে। আজ চোখ মেলেও সেসব আর দেখা যায় না।"
গ্রামের শিশুরা আগে খেলতে খেলতে বাসা দেখত, বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত বাবুই পাখির শৈল্পিক কারুকাজের দিকে। এখন সেই বিস্ময় আর আনন্দ তাদের জীবনে নেই।
পরিবেশবিদ ও স্থানীয় কৃষকদের মতে, কয়েকটি কারণে বাবুই পাখি দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে—কৃষিজমিতে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার,তাল ও খেজুরগাছ কেটে ফেলা,গ্রামীণ পরিবেশের পরিবর্তন, পাখির জন্য নিরাপদ খাদ্যের অভাব।
ফলে বাবুই পাখি উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে ধীরে ধীরে গ্রাম থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার এক কৃষক জানালেন, "আগে আমার মাঠের পাশে বাবুই পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে আসত। এখন আর তাদের দেখি না। কীটনাশক দেওয়ার পর থেকে ধানের ক্ষেতে ছোট পোকামাকড় কমে গেছে। তাই হয়তো তারা টিকে থাকতে পারছে না।"
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গ্রামে তাল, খেজুর ও দেশি গাছ লাগাতে হবে। নির্বিচারে কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে আবারও বাংলার আকাশে ভেসে আসবে বাবুই পাখির ডাক, আর দেখা মিলবে ঝুলন্ত শৈল্পিক বাসার।
সিরাজগঞ্জে বাবুই পাখি ও তাদের ঝুলন্ত বাসা শুধু প্রকৃতির শোভাই নয়, গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখনই উদ্যোগ না নিলে একদিন হয়তো আমাদের সন্তানরা বাবুই পাখির কথা জানবে শুধু বইয়ের পাতায় কিংবা ছবিতে।
কালের সমাজ // র.ন


আপনার মতামত লিখুন :