ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

গোপালগঞ্জে সন্তানকে ফেরত পেতে ও মানব পাচারকারী চক্রের শাস্তির দাবিতে মায়ের সংবাদ সম্মেলন

কালের সমাজ | মুকসুদপুর (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি জুলাই ১৭, ২০২৫, ০১:৩১ পিএম গোপালগঞ্জে সন্তানকে ফেরত পেতে ও মানব পাচারকারী চক্রের শাস্তির দাবিতে মায়ের সংবাদ সম্মেলন

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের এক মায়ের আহাজারি—পুত্রসন্তানকে ফেরত পেতে এবং মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন হাসিনা বেগম নামের এক মা।

 

বুধবার (১৬ জুলাই) বেলা ১১টায় উপজেলার জলিরপাড় বাজার সংলগ্ন নিজ বাড়িতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে হাসিনা বেগমের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার ছোট বোন লাবনী আক্তার।

 

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জলিরপাড় ইউনিয়নের বনগ্রাম বাজার এলাকার বাসিন্দা মৃত আবুল কাসেম শেখের স্ত্রী হাসিনা বেগমের দুই ছেলে—হোসাইন মানিক ও রেজওয়ান ইসলাম রতন (১৯)। ছোট ছেলে রেজওয়ান ইসলাম শিবচর উপজেলার একটি মাদ্রাসায় মাওলানা বিভাগে পড়ালেখা করতেন।

 

লাবনী আক্তার জানান, হাসিনা বেগমের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জুয়েল শেখ (৩৭), কালা শেখ (৪২), বর্ষা (২৫), শিউলী আক্তার শারমিন (২৮), সুইটি বেগম (২৫), সাবানা (৩৫) এবং ভাষানী (৪২)—এদের বিরুদ্ধে মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ মাদারীপুরের রাজৈরের, কেউ মুকসুদপুর ও গাজীপুর জেলার বাসিন্দা।

 

এই চক্রটি রেজওয়ানকে ইতালি পাঠিয়ে ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখায়। এজন্য মোট ২০ লাখ টাকা দাবি করে। প্রথম দফায় ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর হাসিনা বেগম স্থানীয় সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তাদের হাতে ৮ লাখ টাকা এবং রেজওয়ানের পাসপোর্ট তুলে দেন। এরপর ২০২৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আরও ২ লাখ টাকা নেন তারা।

 

রেজওয়ানকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে তাকে ইতালির বদলে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। পরবর্তীতে ৬ লাখ টাকা আরও আদায় করা হয় হাসিনা বেগমের কাছ থেকে। তারপরও রেজওয়ানকে ইতালি না পাঠিয়ে লিবিয়ায় আটকে রাখা হয় এবং চক্রটি তার মুক্তির জন্য ফের ১৫ লাখ টাকা দাবি করে।

 

গত কয়েক মাস ধরে রেজওয়ানের সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। হাসিনা বেগম ছেলেকে ফেরত চাইলে চক্রটি তাকে হুমকি দিয়ে অর্থের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।

 

পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় ২০২৫ সালের ২৯ মে হাসিনা বেগম মুকসুদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং: জি আর-১৭৯/২৫)। মামলায় জুয়েল শেখসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়।

 

পরে ২৯ জুন ভোরে র‍্যাব-৮ এর অভিযানে মামলার প্রধান আসামি জুয়েল শেখ ও কালা শেখকে আটক করা হয়। বর্তমানে তারা গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে রয়েছে।

 

সংবাদ সম্মেলনে হাসিনা বেগম বলেন, “আমি একজন অসহায় মা। আমার ছেলেকে ফেরত চাই। যারা আমার ছেলেকে লিবিয়ায় আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

 

মামলার তদন্তে গোহালা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই চক্রটি একটি সক্রিয় মানব পাচারকারী দল, যারা উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে বিদেশে পাঠানোর নামে লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে সন্ত্রাসী মাফিয়া গ্যাংয়ের মাধ্যমে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে থাকে।

 

কালের সমাজ//এসং.র.ন

Side banner
Link copied!