ঢাকা শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

রাজনীতির মাঠে সুখবর নেই, চলছে নোংরামি

কালের সমাজ | হাসানুল কাদির জুলাই ১৭, ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম রাজনীতির মাঠে সুখবর নেই, চলছে নোংরামি

রাজনীতির মাঠে সুখবর নেই। যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পতন হয়েছিল, সেই স্বপ্ন ও প্রত্যাশা বুঝি স্বপ্নই থেকে যাবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছর না পেরুতেই রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর শুরু হয়েছে অনৈক্য, প্রতিহিংসা ও নোংরামি। অফলাইনে যেমন এ প্রবণতা আছে, তার শতগুণ বেশি অনলাইন তথা ডিজিটাল মিডিয়ায়। কেউ কাউকে ছাড়ছে না। 

 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে যেমন অশ্লীল মন্তব্য করা হচ্ছে, ঠিক তেমনি দল হিসেবে বিএনপিকেও জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির নেতারা বলছেন, বিএনপি এখন চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপি থেকে আবার বলা হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীকে পাকিস্তান এবং চরমোনাইর ইসলামী আন্দোলনকে আফগানিস্তান পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এমন ধরনের উল্টা-পাল্টা বক্তব্য-বিবৃতিতে রাজনীতির মাঠ যেন বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।

 

একটি সুন্দর সম্ভাবনাময় নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে জুলাই বিপ্লব সংঘঘটিত হয়েছিল। রাজনীতিতে সুবাতাস আসবে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে এবং প্রতিহিংসা দূর হবে-এমন প্রত্যাশা ছিল ছোট-বড়, আমখাস তথা সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতার লোভে রাজনীতির মাঠ কলুষিত হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের নামে ছড়ানো হচ্ছে নানা রকম কুৎসা, রটানো হচ্ছে নোংরা অপপ্রচার। এমনকি অকথ্য ভাষায় রাজনৈতিক নেতাদের গালাগালিও করা হচ্ছে। সুস্থ রাজনীতির প্রত্যাশা দিনদিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে বিশেষ করে বর্বরোচিত সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম নোংরামি শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্যে গণতন্ত্র উত্তরণের পথে বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। তাদের উচিত মতপার্থক্য দ্রুত কমিয়ে আনা।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘রাজনীতি বিরোধমুক্ত না। গণতান্ত্রিক দেশে একাধিক রাজনৈতিক দল থাকে। বহু দল থাকার অর্থই বহু মত-পথ থাকবে। মতের সঙ্গে পার্থক্য থাকবে। তিনি বলেন, মতপার্থক্যকে বড় করে দেখার কিছু নেই। এ মুহূর্তে যে মতপার্থক্যগুলো দেখা দিয়েছে, সেটা না দেখা দিলেই ভালো হতো। মতপার্থক্যের ফলে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে, এর আশঙ্কা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত মতপার্থক্য যত দ্রুত সম্ভব কমিয়ে আনা যুক্তিযুক্ত হবে।’

 

স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠে অনৈক্যের সুর ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। ভোটের হিসাবনিকাশ যত এগিয়ে আসছে বিরোধ ততই প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে। দীর্ঘদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোটের অধিকারসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে যারা রাজপথে শামিল ছিলেন, মাত্র ১১ মাসের মাথায় এসে তারা এখন একে অপরকে নিশানা বানাচ্ছেন। এমনকি জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত সফল গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যসহ একধরনের বিরোধ স্পষ্ট হচ্ছে। দীঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী একে অপরকে কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখছে। যদিও স্বৈরাচারী হাসিনাবিরোধী ১৫ বছরের আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপক অবদান ও ত্যাগ রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের সময় নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ইস্যুর সমাধান না হতেই এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা চলছে।

 

এদিকে এমন বৈরী সম্পর্কের মধ্যে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে কেউ কেউ বিশেষ ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এমন পরিস্থিতির সুযোগ নেবে, এটাই স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে দলের অনেক পলাতক নেতা বিদেশে থাকাবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন। এরকম পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জটিল সমীকরণ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, নির্বাচন সংস্কার কতটুকু হবে, কবে নাগাদ হবে এবং সংস্কার শেষে নির্বাচন কবে হবে-এমন বিতর্কের পর এখন নতুন করে যুক্ত হলো অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন। এটি পানি অনেক ঘোলা করতে পারে। এ ছাড়া বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল, নতুন সংবিধান রচনা, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, এমনকি গণভোটের আয়োজন নিয়েও মাঠ সরগরম হতে পারে। এক কথায় বলা যায়, স্বার্থের দ্বন্দ্বে ভেঙে পড়ছে জুলাই বিপ্লবের জাতীয় ঐক্য। তবে দেশের স্বার্থে এ মুহূর্তে সবার আগে ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী দল ও শক্তিগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য থাকাটা খুবই জরুরি।

----হাসানুল কাদির

কালের সমাজ//এসং.র.ন

Side banner
Link copied!