ঢাকা রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২

মাদারীপুরে মাঠে বিএনপির একাধিক প্রার্থী, ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থীও সক্রিয়

কালের সমাজ | আরিফুর রহমান, মাদারীপুর প্রতিনিধি আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৫:৫২ পিএম মাদারীপুরে মাঠে বিএনপির একাধিক প্রার্থী, ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থীও সক্রিয়

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জেলা মাদারীপুরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ আধিপত্য বিস্তার করলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি ঘরানার দলগুলো সক্রিয়ভাবে মাঠে নেমেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থাকায় নির্বাচনী সমীকরণে নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে।

মাদারীপুরের তিনটি আসন গঠিত হয়েছে জেলার ৫টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভা নিয়ে। আড়িয়াল খাঁ, কুমার ও নিম্ন কুমারসহ সাত নদীবেষ্টিত এ জেলায় গত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৪২ জন। আয়তনে সবচেয়ে বড় আসন মাদারীপুর-২। তিনটি আসনেই বিএনপি একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর দৌড়ে রয়েছে, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।

উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ
দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেও প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ তুলছেন সাধারণ মানুষ। পৌর শহরের মাঝ দিয়ে নির্মিত ২০০ কোটি টাকার চার লেন সড়ক মাত্র পাঁচ বছরেই বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু হয়নি। মেডিকেল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিও উপেক্ষিত রয়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়নের নামে বরাদ্দের বড় অংশই গেছে প্রভাবশালী নেতাদের ভাগ্যে।

মাদারীপুর-১ (শিবচর)
এই আসনে বিএনপির একাধিক নেতার মনোনয়ন প্রত্যাশা থাকায় বিভক্তি তৈরি হয়েছে। মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কামাল জামান নূরুদ্দিন মোল্লা, সাবেক সংসদ সদস্য নাভিলা চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান ও আইনজীবী ফোরামের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন মিয়া।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী উপজেলা আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকেও মাওলানা আকরাম হোসেনকে একক প্রার্থী করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জহিরুল ইসলাম মিন্টুও মাঠে সক্রিয় হয়েছেন।

মাদারীপুর-২ (রাজৈর ও সদরের একাংশ)
দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে আধিপত্য ছিল আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এবার বিএনপির মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন সাবেক এমপি হেলেন জেরিন খান, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জাহান, সাবেক ছাত্রদল নেতা মিল্টন বৈদ্য, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব এডভোকেট মাসুদ পারভেজ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট জাফর আলী মিয়া।

জামায়াতে ইসলামী এ আসনে প্রার্থী করেছে মাওলানা আব্দুস সোবাহান খানকে। ইসলামী আন্দোলনের হয়ে নাম ঘোষণা করেছেন মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী। খেলাফত মজলিস থেকেও প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা আব্দুস সোবহান।

মাদারীপুর-৩ (কালকিনি, ডাসার ও সদরের একাংশ)
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে বর্তমানে বিএনপি নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান মাশুক এবং সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের মধ্যে মনোনয়ন যুদ্ধ তৈরি হয়েছে। এতে দলের মধ্যে বিভক্তির আশঙ্কা রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী করেছে কালকিনি পৌরসভার আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম মৃধাকে। ইসলামী আন্দোলনের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ফরিদপুর অঞ্চলের যুব আন্দোলনের নেতা মাওলানা এসএম আজিজুল হক।

নির্বাচনী আমেজ
তিনটি আসনেই বিএনপি ও ইসলামি দলগুলোর প্রচার-প্রচারণা জোরদার হয়েছে। গ্রাম থেকে শহর— সর্বত্র নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ মাঠে নিষ্ক্রিয় থাকায় ভোটযুদ্ধে এবার ভিন্ন সমীকরণ গড়ে উঠবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

কালের সমাজ//র.ন

Side banner
Link copied!