ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২

গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলা, হুমকিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১১:১৪ এএম গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলা, হুমকিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি

ফিলিস্তিনের গাজায় আবারও ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গুলিবর্ষণে অন্তত কয়েকজন নিহত হয়েছেন। নতুন এই সহিংসতা হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন আশঙ্কা তৈরি করেছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা এখন তৎপর ভূমিকা রাখছেন।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলের আল-শাআফ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর দুটি পৃথক হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নিজেদের ঘরবাড়ি দেখতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা গুলি চালিয়েছে এমন কিছু ব্যক্তির দিকে যারা “হলুদ সীমারেখা” অতিক্রম করে শুজাইয়া এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এবং সেনাদের জন্য “হুমকি তৈরি করেছিল”।

এই “হলুদ রেখা” হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকাশিত ৪ অক্টোবরের মানচিত্রে নির্ধারিত একটি অস্থায়ী সীমারেখা, যার পেছনে ইসরায়েলি সেনারা অবস্থান করছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ওই সীমারেখা নিয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি রয়েছে।

তুফাহ এলাকার ৫০ বছর বয়সী বাসিন্দা সামির বলেন, “পুরো এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা মানচিত্র দেখেছি, কিন্তু কেউ বলতে পারছে না রেখাটি আসলে কোথায়।”

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর থেকে গাজায় একাধিকবার হামলা ও সহিংসতা ঘটেছে। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসেবে এখন পর্যন্ত ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, গত রোববারের ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৪২ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে।

ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস যোদ্ধারা রাফাহ এলাকায় তাদের দুই সেনাকে হত্যা করেছিল; প্রতিশোধ হিসেবেই এই হামলা চালানো হয়। তবে হামাস অভিযোগটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, রাফাহর ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত অংশে তাদের কোনো ইউনিট সক্রিয় নেই।

হামাসের এক মুখপাত্র বলেন, “ইসরায়েল নতুন করে যুদ্ধ শুরু করার অজুহাত তৈরি করছে।”

সংগঠনটি দাবি করেছে, তারা এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং বাকিদের মৃতদেহ হস্তান্তরের চেষ্টা করছে। তবে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে হামাস।

এদিকে রোববার ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দিলেও পরে জানায়, যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর রয়েছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক জানিয়েছেন, সহায়তা পাঠানো পুনরায় শুরু হয়েছে, তবে কতটুকু প্রবেশ করতে পেরেছে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজযুম বলেন, “ইসরায়েলি বাহিনী এখনো বিভিন্ন চেকপয়েন্টে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো আটকে রেখেছে, এসব ট্রাকে জরুরি খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “গাজার এই ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি রক্ষা করা এখন মানবতার অপরিহার্য দাবি। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করা উচিত।”

Side banner
Link copied!