সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন আয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বর্তমান ডিজিটাল যুগে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেও ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। সঠিক কৌশল এবং সামান্য পরিকল্পনা থাকলেই এই জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি মাসে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করতে পারেন। এখানে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আয় করার পাঁচটি কার্যকর ও পরীক্ষিত উপায় তুলে ধরা হলো।
১. হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবসা করে আয়
আপনার যদি পোশাক, গয়না, গৃহসজ্জা বা খাবারের মতো যেকোনো ছোট বা মাঝারি ব্যবসা থাকে, তবে হোয়াটসঅ্যাপ আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস অ্যাকাউন্টে আপনি আপনার পণ্যের ক্যাটালগ তৈরি করে সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতে পারেন। গ্রাহক যোগাযোগ, অর্ডার সংগ্রহ এবং পেমেন্ট লিংক (যেমন: বিকাশ/নগদ বা অন্য পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে) পাঠানো—সবকিছুই একটি অ্যাপের মাধ্যমে সহজে করা যায়। সঠিক ডিজিটাল বিপণনের মাধ্যমে এই ব্যবসা থেকে মাসিক লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব।
২. অনলাইন কোর্স ও প্রশিক্ষণ বিক্রি
আপনার যদি ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ভাষা শিক্ষা বা অন্য কোনও বিশেষ দক্ষতা থাকে, তবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আপনি আপনার অনলাইন কোর্স বা প্রশিক্ষণ বিক্রি করতে পারেন। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের কোর্সের উপকরণ, ভিডিও লেকচার ও অ্যাসাইনমেন্ট পাঠানো যায়। এমনকি লাইভ সেশনের আয়োজনও করা যায়। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রচারের মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে দক্ষ ব্যক্তিরা মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারেন।
৩. হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল দিয়ে কন্টেন্ট শেয়ার করে আয়
মেটা সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল সুবিধা চালু করেছে, যা অনেকটাই টেলিগ্রাম বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মতো। আপনি নিজের চ্যানেল তৈরি করে প্রযুক্তি, ফিটনেস, সংবাদ, শিক্ষা বা বিনোদন সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করতে পারেন। আপনার চ্যানেলে যদি হাজার হাজার ফলোয়ার থাকে এবং আপনার কন্টেন্ট জনপ্রিয় হয়, তবে বিভিন্ন ব্র্যান্ড স্পনসর করা কন্টেন্টের জন্য আপনাকে আয় দিতে পারে। এটি কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য আয়ের নতুন পথ খুলে দিয়েছে।
৪. ডিজিটাল মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার
অনেক ছোট ব্র্যান্ড এবং স্টার্টআপ তাদের পণ্য ও পরিষেবা দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ডিজিটাল মার্কেটার খুঁজছে। আপনার যদি একটি বড় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বা কমিউনিটি থাকে, তবে আপনি সেই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তাদের পণ্য প্রচার করতে পারেন। বিনিময়ে কোম্পানিগুলি আপনাকে বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ প্রদান করবে। এইভাবে, কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই শুধুমাত্র আপনার মোবাইল নম্বর ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভালো একটি অঙ্কের টাকা আয় করা যায়।
৫. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন
বর্তমানে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট বা দেশীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম অফার করে। আপনি এই প্রোগ্রামে যোগ দিয়ে পণ্যের লিঙ্ক সংগ্রহ করতে পারেন এবং সেগুলি আপনার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বা ব্রডকাস্ট লিস্টের মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন। যখন কেউ আপনার শেয়ার করা লিঙ্কের মাধ্যমে পণ্য কেনাকাটা করবে, তখন আপনি সেই বিক্রির উপর কমিশন পাবেন। প্রচুর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ও বিশ্বাসযোগ্য নেটওয়ার্ক থাকলে এই পদ্ধতিতে মাসে ৫০ হাজার থেকে লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
সব মিলিয়ে, হোয়াটসঅ্যাপ কেবল চ্যাটিং বা কলিংয়ের জন্য নয়, এটি একটি শক্তিশালী আয়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। প্রয়োজন শুধু সৃজনশীলতা, সঠিক পরিকল্পনা ও বাজারে চাহিদাসম্পন্ন একটি কৌশল।
কালের সমাজ/এসআর


আপনার মতামত লিখুন :