ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

সাতক্ষীরায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতা

কালের সমাজ | এম রফিক, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জুলাই ১১, ২০২৫, ০৪:৫৫ পিএম সাতক্ষীরায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতা

টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার শতাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সৃষ্টি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। শহর ও আশপাশের গ্রামীণ অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমে থাকায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, বিশেষ করে চলমান এইচএসসি ও অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা।


শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ এখন রীতিমতো এক জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। প্রবেশপথে কাদা ও পচা পানির দুর্গন্ধে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। শিক্ষার্থীরা জানায়, কলেজ ক্যাম্পাসসহ চারপাশের এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটু পানিতে হেঁটে ক্লাসে ও পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হচ্ছে।


এইচএসসি পরীক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, “বৃষ্টির মধ্যে ভিজে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হচ্ছে। ভেজা কাপড়ে তিন ঘণ্টা বসে পরীক্ষা দেওয়া খুবই কষ্টকর।”


কলেজ শিক্ষার্থী তৈবুর রহমান জানান, “পানিতে ডুবে থাকা ড্রেনের পঁচা পানি ও বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে গেছে। হাঁটার সময় পায়ে চুলকানি দেখা দিচ্ছে।”


সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের গাউসার রেজা বলেন, “প্রতি বছর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও কোনো স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। কলেজে ড্রেনেজ ব্যবস্থারও অভাব রয়েছে।”


শুধু শহর নয়, উপজেলার অনেক স্কুল ও মাদ্রাসাও পানিতে তলিয়ে গেছে। পাটকেলঘাটা আমিরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস স্কুল, বদ্দিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভোমরা রাশিদা স্কুলসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের কেউ জুতা হাতে, কেউ বাঁশ বা ভেলা ভেসে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে।


মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত বৈদ্য বলেন, “আঙিনায় হাঁটাচলাই দুঃসাধ্য। শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে পরীক্ষা দিচ্ছে।”


অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায়। তাদের আশঙ্কা, এ অবস্থায় সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে তারা ঠান্ডা, জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।


বিশেষ করে শহরতলির উত্তর কাটিয়া, ইটাগাছা, কুখরালি, ব্রহ্মরাজপুর, ঝাউডাঙ্গা, ফিংড়ি, আগরদাঁড়ি, বাঁকাল, মাছখোলা ও পাড়মাছখোলা এলাকায় জলাবদ্ধতার প্রভাব বেশি দেখা গেছে।


সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শেখ আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, “শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কাদা-পানি পার হয়ে শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে, অথচ স্থায়ী সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই।”


সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শোয়াইব আহমাদ বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”


সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ জানান, “জলাবদ্ধতা রোধে শুধু প্রশাসনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। স্থানীয়দের অংশগ্রহণে বাঁধ নির্মাণসহ সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।”


তথ্যমতে, সাতক্ষীরা জেলার সাত উপজেলায় রয়েছে ২ হাজারেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে ১ হাজার ৩০০ সরকারি প্রাথমিক, ৫ শতাধিক মাধ্যমিক এবং ৬০টির বেশি কলেজ রয়েছে। জলাবদ্ধতা এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন পাঠদান ও পরীক্ষায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।


কালের সমাজ//এসং.র.ন

Side banner
Link copied!