বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির মূলে রয়েছে কৃষি। আর সেই কৃষিকে এগিয়ে নিতে যারা নীরবে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার সদরের একজন সজ্জন মানুষ, সমাজসেবক ও কৃষি উদ্যোক্তা মুজিবুল হক মাস্টার। যিনি শুধুমাত্র একজন শিক্ষক হিসেবেই পরিচিত নন, বরং “অগ্রণী বীজ ভান্ডার”-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আজ কৃষকের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন আস্থার প্রতীক।
২০০৮ সালে নিজের পুঁজি ও আগ্রহকে ভিত্তি করে তিনি যাত্রা শুরু করেন একটি ক্ষুদ্র বীজের দোকান দিয়ে। শুরুতে ছিল নানা প্রতিবন্ধকতা, সঠিক উৎস থেকে ভালো বীজ সংগ্রহ, কৃষকদের আস্থা অর্জন, বাজারে প্রতিযোগিতা। কিন্তু ধৈর্য, সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে ধীরে ধীরে তিনি জয় করেছেন কৃষকদের বিশ্বাস। আজ তাঁর “অগ্রণী বীজ ভান্ডার” চান্দিনা উপজেলায় একটি প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।তিনি তার বীজ ব্যবসার পাশাপাশি রয়েছে "বার্তা বিপণী" নামে একটি সংবাদপত্র এজেন্সী ও একটি কুরিয়ার সার্ভিস এজেন্সি । তার এজেন্সিতে পত্রিকা কিনতেও পড়তে এবং চিঠিপত্র প্রেরণ ও গ্রহণ করতে আসা লোকজন অনেকেই ভালো মানের বীজ ও কীটনাশক কিনে নিয়ে যান।
এখানে উচ্চফলনশীল ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, সবজি ও ফলের উন্নত জাতের বীজ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে থাকে মানসম্পন্ন সার, কীটনাশক, দানাদার ও তরল জৈব সার, হরমোন, পোকা দমন ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি। শুধু উপকরণ সরবরাহ নয়, প্রতিটি কৃষকের জন্য তিনি হয়ে ওঠেন একজন পরামর্শদাতা ও বন্ধু।
মুজিবুল হক মাস্টার তার নিকট বীজ কিনতে আসা কৃষকদের সাথে কৃষি সম্পর্কে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করে জমির মাটি ও তার প্রকৃতি ধারণ বোঝে কৃষকদের কে বীজ বপনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মাঝেমধ্যে তিনি কৃষকদের আবাদ করা জমি দেখার জন্য কৃষকের সাথে মাঠে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে মাঠে সময় কাটান। তাদের মাটির প্রকৃতি, মৌসুম, সেচব্যবস্থা, জলবায়ু কিছু বিবেচনায় নিয়ে বীজ নির্বাচন ও চাষাবাদের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন। অনেক নতুন কৃষক তাঁর পরামর্শে প্রথমবারেই লাভবান হয়ে বলেন “মাস্টার সাহেবের কথায় চাষ করেই এবার ভালো ফলন পেয়েছি।”
চান্দিনা ছাড়াও দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস, হোমনা ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কৃষকরাও তাঁর কাছে আসেন বীজ ও উপকরণের জন্য। কেউ কেউ ফোনে পরামর্শও নেন। তিনি কৃষকদের নাম, জমির পরিমাণ ও চাষপদ্ধতি ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেন, যাতে পরবর্তী মৌসুমে সহজেই সহায়তা করতে পারেন।
একজন শিক্ষক হয়েও কৃষিকে ভালোবেসে তাঁর এই অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তিনি বিশ্বাস করেন “দেশের উন্নয়ন সম্ভব তখনই, যখন কৃষক লাভবান হবে।” তাঁর “অগ্রণী বীজ ভান্ডার” এখন শুধু একটি দোকান নয়, বরং এটি এক ধরনের কৃষি সচেতনতা কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বারবার বলেন “চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও বাণিজ্যিক চাষাবাদে মনোযোগ দাও, কৃষিও হতে পারে সম্ভাবনার বড় ক্ষেত্র।”
মুজিবুল হক মাস্টারের মতো উদ্যোক্তা কৃষকের পাশে থাকলে আমাদের কৃষি আরও গতিশীল হবে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, আর দেশের অর্থনীতি হবে আরও সমৃদ্ধ।
কালের সমাজ//এসং.র.ন
আপনার মতামত লিখুন :