প্রবল ঘূর্ণিঝড় মেলিসা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছে। ঝড়ে ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে, অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং অন্তত ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জ্যামাইকা, হাইতি ও কিউবা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব দেশের বহু অঞ্চল এখনো বিদ্যুৎবিহীন ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ঝড়ের প্রধান আঘাত আসে জ্যামাইকায়। ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি বেগে বয়ে যাওয়া ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার হারিকেনটি দেশটিতে ভয়াবহ ক্ষতি করেছে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস বলেন, “দেশের প্রায় সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে—৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ির ছাদ নেই, হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন ও বন্দরঘর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।”
জ্যামাইকায় কমপক্ষে পাঁচজন এবং হাইতিতে আরও ২০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জন শিশু। যদিও বর্তমানে মেলিসা দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি–১ ঝড়ে পরিণত হয়েছে, তবুও এটি এখনো সক্রিয় ও বিপজ্জনক।
ঝড়ের পর হাজারো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। জ্যামাইকার স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি জানিয়েছেন, চারজনকে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার পর মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
দেশটির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। মন্টেগো বে শহরের মেয়র রিচার্ড ভারনন বলেন, “পুরো শহরের অর্ধেক পানির নিচে। এখন আমাদের প্রধান কাজ—সবাই নিরাপদে আছে কি না তা নিশ্চিত করা।”
রাজধানী কিংস্টনের বাসিন্দা গর্ডন সোয়াবি জানান, সমুদ্রের ধারে তার কাজিনের বাড়িটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। “সে আজীবনের সঞ্চয়ে বাড়ি বানিয়েছিল, এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ,” বলেন তিনি।
এক বিদেশি পর্যটক পিয়া শেভালিয়ে বলেন, “রাতভর ঝড়ের শব্দে জানালাগুলো কাঁপছিল, মনে হচ্ছিল ঘর ভেঙে যাবে।”
এরপর ঝড়টি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে কিউবার দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে প্রবেশ করে, ঘণ্টায় প্রায় ১৮০ কিলোমিটার গতির বাতাসে সেখানেও ব্যাপক ক্ষতি করে। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াস–কানেল জানান, দেশটি আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিল, যা হতাহত কমাতে সহায়তা করেছে।
হাইতিতে আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। খ্রিস্টান মানবিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড রিলিফ-এর কর্মকর্তা পাসকাল বিমেনিইয়ামানা বলেন, “অনেক বাড়ি উপকূলে ভেসে গেছে, অনেকে হাতে যা আছে তা দিয়েই ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন।”
দুর্যোগের পর যুক্তরাষ্ট্র জ্যামাইকায় জরুরি সহায়তা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে হাইতি ও বাহামাস আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নের জন্য একটি বিশেষ দল পাঠানো হবে।
এদিকে স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যার পর মেলিসা বাহামাসের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঝড়টি বারমুডা অতিক্রম করে শুক্রবার রাতে কানাডার সেন্ট জনস অঞ্চলে গিয়ে একটি প্রবল এক্সট্রা-ট্রপিকাল সাইক্লোনে রূপ নেবে।


আপনার মতামত লিখুন :